কবি ফররুখ আহমদের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার দাবি

কবি ফররুখ আহমদের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার দাবি
মাগুরা: সুনশান নীরবতা আর সৌন্দর্যের মাঝে ইসলামী রেঁনেসা কবি ফররুখ আহমদের কবি সত্ত্বার নানা স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে আছে বাড়িটি। গ্রামীণ পরিবেশ আর সামনের গড়াই নদীর নির্মল হাওয়া প্রাণ জুড়িয়ে দেয় দর্শনাথীদের। মাগুরা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর–পূবে শ্রীপুর উপজেলার গড়াই নদীর পাড়ের মাঝাইল গ্রামের সৈয়দ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কবি ফররুখ আহমেদ। দীর্ঘকাল তিনি বসত করেছেন বাড়িটিতে। সেখানে স্থাপিত হয়েছে ফররুখ আহমদ স্মৃতি সংসদ। দর্শনাথীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্রামাগার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িটির প্রবেশ মুখে কবির পুরনো বসতঘর। এই ঘরে বসবাস করতেন তিনি। পাশেই উত্তর দিকে প্রবেশ মুখের ডানদিকে কবির কবরস্থান। পেছনে কবির স্মৃতি সংসদের নির্মাণাধীন ভবন। মাগুরা-ফরিদপুর জেলার সীমান্তবর্তী কামারখালী সেতুর দক্ষিণেই মাঝাইল গ্রাম। কবির বাড়ির চারদিকে এখন লাভ ফিতার খুঁটি দিয়ে ঘেরা। লাল নিশান দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে কবির জন্ম ঘরটিও। মধুখালী-মাগুরা রেললাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণের এই লাল নিশানা দিয়ে গেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।এটি ঘিরে চলছে সমালোচনা। স্থানীয়রা চাইছে কবির বাড়ি যেন অক্ষত থাকে।
কবি ফররুখ আহমদের ভাইয়ের বৌ ফাতেমা বেগম  বলেন, এই বাড়িতে আমি বৌ হয়ে এসেছি প্রায় ৪০ বছর। রেল প্রকল্পের ব্যক্তিরা কবির জন্মভিটা ঘিরে লাল নিশান দিয়ে গিয়েছে আর বলছে এখান দিয়ে রেললাইন তৈরি হবে।  তিনি আরো বলেন, হাজার কষ্টের মাঝেও জীবনের বাকিটা সময় কবির এই স্মৃতিচিহ্ন ধরেই বাঁচতে চাই।রেললাইন যদি কবির বাড়ির উপর দিয়ে যায় তাহলে কবির শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু বিলীন হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম শুধু কবিকে বইয়ের পাতায় ছাড়া আর কোথায় খুঁজে পাবে না। তাই কবির বাড়িটি রক্ষা করে বিকল্প উপায়ে রেললাইন তৈরির দাবি করেন তিনি।কবির ভাইয়ের মেয়ে সৈয়দা দিলরুবা  বলেন, যেদিন থেকে লাল নিশান লাগিয়েছে সেদিন থেকে আমাদের দুশ্চিন্তা আর কাটছে না। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ এখানে কবির বাড়ি দেখতে আসেন। কবির স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে বেড়ায় তারা।  কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কবির বাড়িটি যদি রেল কর্তৃপক্ষ নিয়ে ভেঙে ফেলে। আমরা কোথায় যাব। কোথায় বসবাস করবো। আমাদের তো আর যাওয়ার জায়গা থাকবে না।
মাঝাইল গ্রামের বাসিন্দা ওমর আলী বলেন, কবি ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের ১০ জুন মাগুরার শ্রীপুর মাঝইল পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ হাতেম আলীর বাড়ি এটি। এখানেই তার পূবপূরুষদের আদিবাস। এই বাড়িটি রক্ষার দাবি করেন তিনি।স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ন রশীদ মুহিদ বলেন, কবির বাড়ির চারদিকে রেললাইনের সীমা ঠিক আছে। লাল পতাকাও বাঁধা হয়েছে। বিষয়টি আমি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। সীমানা নির্ধারিত হলেও মূল রাস্তায় কবির বাড়ির কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি অরো বলেন, কবি তো আমাদের জাতীয় পর্যায়ের কবিদের একজন। তার বাড়ি রক্ষায় তো সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিছুদিন আগেও কবির বাড়ি দেখতে আসা দর্শনাথীদের জন্য টয়লেট ও বিশ্রামাগার তৈরি করা হয়েছে। তাই উদ্বিগ্ন হাওয়ার কিছু নেই। কবির বাড়ির পাশ দিয়ে রেললাইন হবে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. আশরাফুল আলম  বলেন, মধুখালী-মাগুরা অংশে নতুন রেললাইনের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে তার মধ্যে কবি ফররুখ আহমদের বসতভিটা পড়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। মাগুরা জন প্রতিনিধিসহ নানা পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সবার পরামর্শে প্রকল্পের নকশা পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কবির জন্ম নেওয়া বাড়িটিসহ পুরো বাড়িটি অক্ষত রাখতে রেললাইনের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নকশায় একটা ওভারব্রিজ নির্মাণ দেখানো হয়েছে কবির বাড়ির পাশ দিয়ে ওভার ব্রিজের মাধ্যমে রেললাইন চলে যাবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া