ফারজানার অবৈধ সম্পদের পিছনে যত সব কীর্তি

ফারজানার অবৈধ সম্পদের পিছনে যত সব কীর্তি
প্রণব কুমার সাহা, মাদারীপুর প্রতিনিধি:
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হলফনামায় সম্পদ কম দেখাতে তিন কোটি টাকার মূল্যের ডুপ্লেক্স বাড়ি বাবাকে দান করলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফারজানা নাজনীন। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে বইছে আলোচনা ও সমালোচনা। এই ভবন নির্মাণের এত অর্থ জোগান নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। যদিও গুঞ্জন রয়েছে মাদারীপুরের এক প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতায় তিনি এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। গত ৯ এপ্রিল মাদারীপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে হেবা ঘোষণার মাধ্যমে বাবা ইসমাইল হোসেনকে এই ডুপ্লেক্স বাড়িসহ জমি দান করেন মেয়ে ফারজানা নাজনীন। কিন্তু একটি ডোবা শ্রেণির জমি ভরাট করে কিভাবে এই রাজকীয় ভবন নির্মাণ করা হলো তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মাদারীপুরের প্রশাসন ও মাদারীপুর পৌরসভা।
ফারজানা নাজনীন মাদারীপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পেছনে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি। যা নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা।
মাদারীপুর পৌরসভার ১১১নং শকুনী মৌজার ৩৮৭, ৩৮৮ ও ২৮৯ নং দাগে ৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ৩ তলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়িটি। এই সম্পত্তির মালিক ফারজানা নাজনীন ও তার মেয়ে তাসনিম জাহান মীম। ফারজানা নাজনীন তার বাবা কুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনের নামে গত ৯ এপ্রিল ২৩৩৭নং দলিলে ‘হেবা ঘোষণার’ মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন করেন। পরে দাখিল করেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র। নির্বাচনের হলফনামায় সম্পত্তি কম দেখাতেই বাবার নামে লিখে দিলেন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি।
পৌরসভা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ ভূমি জরিপ বিআরএস রেকর্ডে সংশ্লিষ্ট দাগ ও খতিয়ানে ডোবা থাকায় ভবন নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় অনুমোদন দেয়া হয়নি। ওই জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চাইলেও সবশেষ পৌরসভার সার্ভেয়ার ও ইঞ্জিনিয়ারসহ বিশেষজ্ঞরা দেননি কোন অনুমোদন। পরে ফারজানা নাজনীন ক্ষমতার অপব্যবহার করেই এই ভবন নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের হলফনামায় তিনি ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন তিন লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ২ হাজার টাকা। আর নগদ অর্থ সাড়ে ৪ লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন। তাহলে জনমনে এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপুল অর্থে নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িটির অর্থ জোগান আসলো কোথা থেকে? সম্প্রতি এ নিয়ে বেশ কয়েকজন সচেতন নাগরিক ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। দুদককে অনুসন্ধান করতেও অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
মহিলা লীগ নেত্রী ফারজানা নাজনীন বলেন, আমার স্বামী লিয়াকত হাওলাদার ইতালি থাকেন। তার টাকায় এই ভবন নির্মাণ করেছি। এছাড়া আমি জেলার একমাত্র নারী ঠিকাদার, আমি ব্যবসা করি, আমার ব্যবসার টাকায়ও বাড়িটি নির্মাণ ব্যয় করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভবনটি জমিতে খেজুড় গাছ ছিল। এখানে কোন ডোবা ছিল না। পৌরসভায় আমি অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। এখনো অনুমোদন পাইনি, তবে পেয়ে যাবো।
তিনি আরও বলেন, আমি নির্বাচন করবো, এ কারণে এক শ্রেণির মানুষ মিথ্যে কথা বলে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। আমার ভবন নির্মানে কোন নেতা কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি। এটি ভুয়া কথা।
সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেই বাড়ির মালিকানা কেন পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, বাড়ির জমি নিয়ে আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে বিরোধ চালায় বাবার নামে হেবা করা হয়েছে। জমিটা মূলত বাবার, কিন্তু বাড়ি আমি নির্মাণ করেছি। এখন বাবা যাকে ভালো মনে করবে তাকে জমি লিখে দিবে।
মাদারীপুর পৌরসভার সার্ভেয়ার এনায়েত হোসেন বলেন, ফারজানা নাজনীন ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিলেন, পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জায়গাটি ডোবা। বিআরএস রেকর্ডে ডোবা থাকায় পৌরসভা এজন্য কোন অনুমোদন দেয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুরের সহকারি পরিচালক মো. আকতারুজ্জামান বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ আসলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণের অর্থ জোগানের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেয়া হবে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, প্রার্থী যদি সম্পদের তথ্য হলফনামায় গোপন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই কমিশনে লিখিত জানানো হবে। এ ছাড়াও যদি ওই প্রার্থীর (ফারজানা) বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে তাহলে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::