মো:সাগর হোসেন (বেনাপোল প্রতিনিধি): চার বছর পূর্তীতে আর মাত্র দুই মাস বাকী, স্বাক্ষীগণের শুনানীতে সীমাবদ্ধ রয়েছে বেনাপোল কাষ্টমস হাউজের চুরি যাওয়া “১৯ কেজি ৩১৮’০৩ গ্রাম স্বর্ণ চুরির মামলা। বেনাপোল পোর্টথানায় দায়ের কৃত স্বর্ণ চুরির মামলার সর্বশেষ তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি বলছে,কাষ্টমস লকারের দায়িত্বে থাকা কাষ্টমস কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালণে অবহেলা ও বহিরাগতদের দিয়ে লকার দেখভাল করায় এই চুরি সংঘঠিত হয়েছে। অন্যদিকে তারা ধারণা করছে,চুরি হওয়া স্বর্ণ হাত রদল-বদল হওয়ায় কিংবা বিক্রি করে ফেলায় স্বর্ণ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৫ কর্মকর্তা সহ ৭জন কে আসামী করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত আসামীরা এখন জামিনে রয়েছে।
সিআইডি’র চার্জশিটের তথ্যমতে,২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর টানা তিন দিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সরকারি ছুটি এবং ঐ সময় “ঘূর্ণীঝড় বুলবুল”র কারণে কাষ্টম কার্যালয় বন্ধের সুযোগে কাষ্টমস হাউজের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় গোডাউনের তালা ভেঙ্গে চোরেরা ভেতরে যায়। পরে তারা ভল্টের তালা ভেঙ্গে স্টোরের খাতায় লিপিবদ্ধ অনুযায়ী ১৯ কেজি ৩১৮’০৩ গ্রাম স্বর্ণ চুরি করে। ঐ সময় বাজার দর অনুযায়ী স্বর্ণের মূল্য ছিল ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চার্জশিটে বলা হচ্ছে,ভল্টের চাবি ছিল সে সময়কার ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলের কাছে। গোডাউনের অন্যান্য লকারে স্বর্ণ, ডলার সহ মূল্যবান জিনিসপত্র থাকলেও সেগুলি চুরি হয়নি। ভল্ট ভাঙ্গার সময় কাষ্টমস হাউজের সবগুলো “সিসি ক্যামেরা” বন্ধ রাখা হয়েছিল।
১২ নভেম্বর সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে কাষ্টমস হাউজের রাজস্ব কর্মকর্তা এমদাদুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে চুরির মামলা করেন বেনাপোল পোর্ট থানায়। ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলকে তাৎক্ষনিক ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর মামলাটি অগ্রগতির জন্য তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। দেড় বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৪ জুন ৫ কাষ্টমস কর্মকর্তা সহ ৭ জন কে আটক দেখিয়ে চার্জশিট দেন যশোর সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।
বর্তমানে আসামীরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। চার্জশিটে অভিযুক্তরা হচ্ছে-সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা-১। বিশ্বনাথ কুন্ডু(ভল্ট ইনচার্জ),তার গ্রামের বাড়ী খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার জয়পুর গ্রামে,তার পিতার নাম রণজিৎ কুন্ডু। ২। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা- শাহীবুল সরদার(ভল্ট ইনচার্জ) তার গ্রামের বাড়ী রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বাধুলী খালপাড়া গ্রামে,সে মৃত জালাল সরদারের ছেলে। ৩। সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা-শহীদুল ইসলাম মৃধা(ভল্ট ইনচার্জ),তার গ্রামের বাড়ী বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামে,সে মৃত আব্দু রবের ছেলে। ৪। সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা-আরশাদ হোসাইন(ভল্ট ইনচার্জ),তার গ্রামের বাড়ী বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামে,সে মৃত আজিজুল হকের ছেলে। ৫। সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা-মোহাম্মাদ অলিউল্লাহ(ভল্ট ইনচার্জ), তার গ্রামের বাড়ী ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার কসবা উপজেলার চারুয়া গ্রামে,তার পিতার নাম নজরুল ইসলাম। ৬। বেনাপোল কাস্টমস হাউজে কর্মরত এনজিও কর্মী-আজিবার রহমান মল্লিক,তার বাড়ী খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামে,সে মৃত আতিয়ার রহমান মল্লিকের ছেলে। ৭। এনজিও কর্মী শাকিল শেখ,তার গ্রামের বাড়ী যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্টথানাধীন ভবেরবেড় পশ্চিমপাড়া গ্রামে,তার পিতার নাম আব্দুল জলিল শেখ।
আলোচিত এ মামলাটি বর্তমানে যশোর জেলা সদর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। এই মামলায় কাষ্টমস কর্মকর্তা,আনসার সদস্য ও পুলিশ সদস্য সহ মোট ৩৪ জন স্বাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ১০ জন স্বাক্ষী স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। যশোর সদর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) এম ইদ্রিস আলী জানান,দ্রুতই বাকীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলাটি শেষ করা হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ৭ আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বর্ণ চুরির সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।