রাজধানী আদাবরে পিসি কালচার হাউজিংয়ে তীব্র পানি সংকট

রাজধানী আদাবরে পিসি কালচার হাউজিংয়ে তীব্র পানি সংকট

 মোঃ রাকিব হাসান : সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্তই পানির কাজ। পানি ছাড়া কি একদণ্ডও চলে! রান্না, পান, গোসল ও কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সাংসারিক প্রায় সব কাজে রয়েছে পানির অপরিহার্যতা। অথচ ঢাকার মতো ব্যস্ততম নগরীর অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট। এমনকি টাকা দিয়েও সময় মতো মিলছে না পানি। ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) বলছে, বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং টানা লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ সংকট শিগগির কাটবে না। এমনকি তা আগামী দিনে আরও তীব্র হতে পারে।
রাজধানীর আদাবরের পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির (শেখেরটেক) দুইশোর বেশি ভবনে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে বাসায় ঠিকমতো রান্নাবান্নাও করা যাচ্ছে না। টাকা দিয়েও ওয়াসার গাড়ির পানি পাচ্ছেন না সেখানকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দেড় থেকে দুই বছর আগে এই এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়। এখন দিন যত যাচ্ছে, পানি সংকট তীব্র হচ্ছে। এরমধ্যে গত ৪-৫ দিন ধরে টাকা এবং চাহিদা দিয়েও একেবারেই ওয়াসার গাড়ির পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন।
তবে ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই এলাকায় গভীর নলকূপের পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। বিদ্যমান পাম্প দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী পানি উঠানো যাচ্ছে না। এরমধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানি সরবরাহে ওয়াসাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে ওয়াসা। তবে সেটা কী ধরনের চেষ্টা, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি সংস্থাটির সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির ৪, ৫ ও ৭ নম্বর রোডে দুইশোর বেশি আবাসিক ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলোতেই পানি সংকট সবচেয়ে বেশি। দিনে ঠিকমত এক ঘণ্টাও লাইনে পানি থাকছে না। গত পাঁচদিন ধরে এ সংকট তীব্রতর হয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ওয়াসার পানির গাড়ি থেকে পানি কিনছেন। এভাবে পানি কিনতেও দিতে হচ্ছে সিরিয়াল। ফোনকল দেওয়ার দুদিন পর পানি পাচ্ছেন বাসিন্দারা।
পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, তার রোডের দুই-তৃতীয়াংশ বাড়িতে একেবারেই পানি নেই। গত চার দিন ধরে পানি কিনতে হচ্ছে। প্রতি চার হাজার লিটার পানির জন্য ওয়াসাকে ৪০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। আবার এ পানি মোটরের সাহায্যে টেনে ছাদে উঠাতে হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ বিলও বেশি উঠছে।
তিনি বলেন, এ সংকটের কথা ওয়াসার স্থানীয় জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ বা স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। যদিও অনেকবার বলার পর রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে এক ঘণ্টার জন্য লাইনে পানি দিয়েছে ওয়াসা।
প্রায় একই অভিযোগ ৫ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা আশিকুর রেজা চৌধুরীর। তিনি বলেন, ওয়াসার লাইনে কখন পানি আসবে, কখন মানুষ বাসাবাড়িতে পানি সংগ্রহ করবেন কেউ জানে না। প্রায়ই মধ্যরাতের পর লাইনে পানি দিচ্ছে ওয়াসা। ফলে বাধ্য হয়ে রাত জেগে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। মধ্যরাতেও ওয়াসার এক লাইনের বাসিন্দারা পানি পেলে অন্য লাইনের বাসিন্দারা পান না। পানির এ সংকটের কারণে সংসারের অনেক কাজও ঠিকমতো করা সম্ভব হচ্ছে না।
পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি এলাকাটি ওয়াসার মোডস জোন-৩ এর আওতাধীন। এ বিষয়ে জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকা তথা সারাদেশে বৃষ্টিপাত অনেক কম হয়েছে। আবার লোডশেডিংয়ের কারণেও পানি উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে। ওয়াসার সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পানি চাহিদা রাজধানীতে। এ পানি সরবরাহ করতে ওয়াসাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পানির এ সংকট সহসা কাটবে না। বরং শহরের অন্যান্য এলাকায়ও ক্রমান্বয়ে পানির সংকট দেখা দিতে পারে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া