ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ-সহিংসতা বাড়ছে খুলনায়

ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ-সহিংসতা বাড়ছে খুলনায়
খুলনা প্রতিনিধি : খুলনার ৩৪টি ইউনিয়নে ক্রমেই বাড়ছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনী উত্তাপ। এরই মাঝে দফায় দফায় ঘটছে সংঘর্ষ ও সহিংসতা।সুষ্ঠু ভোট নিয়ে দ্বিধা-দন্দ্বে আছেন ভোটাররা। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে সতর্কবস্থায় রয়েছে পুলিশ ও আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।সবশেষ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটিতে নির্বাচনী সহিংসতায় দু’পক্ষের ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।এলাকাবাসী জানায়, ওইদিন দুপুর ১টার দিকে সেনহাটী পুলিশ ক্যাম্পের সামনে সেনহাটী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফারহানা হালিমের এক সমর্থকের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া গাজীর সমর্থকের বাক বিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর জিয়া গাজী তার সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সেখানে আসেন। এ সময় চন্দনীমহলের স্টার জুট মিলের ২নং গেট থেকে মোটরসাইকেল যোগে ফারহানা হালিমের সমর্থকরা এসে সেনহাটী পুলিশ ফাঁড়ির সামনে জিয়া গাজীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। তারা দু’টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।অপর একটি সূত্র জানায়, দুপুরে দৌলতপুর থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে বরইতলা নামক স্থানে পৌঁছালে সেনহাটি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়া গাজীর সমর্থক ফিরোজ আহমেদকে ফারহানা হালিমের লোকজন মারধর করে। এর পরপরই সেনহাটি পুলিশ ক্যাম্পের সামনে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়া গাজীর একাধিক গণসংযোগে হামলা ও দু’টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ গণসংযোগে থাকা নেতা-কর্মীদের মারধর করে। এক পর্যায়ে জিয়া গাজীর সমর্থকরা প্রতিরোধ হিসেবে তাদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে মনিরুল গাজীর লোকজন স্টার জুট মিল ২নং গেটে জিয়া গাজীর সমর্থক মনসুর ও জামালের চায়ের দোকান এবং নজরুলের বাড়ি ভাঙচুর করে। আর সন্ধ্যায় আ.লীগ প্রার্থী ফারহানা হালিমের বড় ছেলে নিলয় চহন্দনীমহল বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়া গাজীর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে। এ নিয়ে এলাকায় দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে।এর আগে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে বটিয়াঘাটার আমিরপুর ইউনিয়নের সৈয়দের মোড়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৫/২০ জন আহত হন।একই দিন সন্ধ্যায় কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের পোস্টার টানানো ও প্রচারণার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী আছের আলী মোড়লের নির্দেশে তার লোকজন বাধা দেয়। এক পর্যায়ে প্রচার মাইক ভাঙচুর করতে থাকে। নৌকার কর্মীরা এতে বাধা দিলে তাদের মারপিট করা হয়। আহত হন ৮ জন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামসুর রহমানের ছেলে মশিউর রহমান মিলন।স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে মাঠে রয়েছেন একই দলের একাধিক প্রার্থী। সবাই প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। যার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ক্ষমতার লড়াই। আর বাড়ছে সহিংসতা।অধিকাংশ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের হওয়ায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১১জন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।তারা হলেন- খুলনা জেলা আ.লীগের সদস্য হায়দার মোড়ল, কয়রা উপজেলা সা.সম্পাদক বিজয় কুমার সরকার, সহ-সভাপতি আমির আলী গাঈন, দিঘলিয়া উপজেলার যুগ্ম সম্পাদক মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্যা, পাইকগাছা থানা আ.লীগ নেতা আব্দুল মজিদ গোলদার, সেনহাটী ইউনিয়নে গাজী জিয়াউর রহমান, কয়রার বেদকাশী ইউনিয়নের আ.লীগ নেতা মোড়ল আছের আলী, বটিয়াঘাটা উপজেলার সদস্য শেখ মো. আসাবুর রহমান, দাকোপ ইউনিয়নের সদস্য সঞ্জয় মোড়ল, বানিশান্তা ইউনিয়নের সদস্য সুভাংশু বদ্ধ্য এবং কামারখোলা ইউনিয়নের সদস্য সমরেশ রায়।শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ও কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এদিকে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ইউপি নির্বাচনের ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হবে।   এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৫৬ জন। তাদের মধ্যে দাকোপের লাউডোব ইউনিয়নে শেখ যুবরাজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া কয়রা উপজেলার ৫ নং ওয়ার্ডে মেম্বর পদে শেখ সোহরাব আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। ৩৪টি ইউনিয়নে ৩০৬টি ওয়ার্ডে মেম্বর প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৪৮১ জন। সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রার্থী ৪৬৪ জন।সূত্রটি জানিয়েছে, ইউনিয়নগুলোতে এবারে মোট ভোটার ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন ও পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন। জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে যেসব ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে সেগুলো হলো- কয়রার আমাদি, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা, উল্টর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী। দাকোপের পানখালী, দাকোপ, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, সুতারখালী, কামারখোলা, তিলডাঙ্গা, বাজুয়া, বানিশান্তা। বটিয়াঘাটার গংগারামপুর, বালিয়াডাঙ্গা, আমিরপুর। দিঘলিয়ার গাজীরহাট, বারাকপুর, দিঘলিয়া, সেনহাটি, আড়ংঘাটা ও যোগীপোল। পাইকগাছার সোলাদানা, রাড়লী, গড়ইখালী, গদাইপুর, চাঁদখালী, দেলুটি, লতা, লস্কর ও কপিলমুনি ইউনিয়ন।সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম  বলেন, জেলার ৩৪টি ইউনিয়নে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রিটার্নিং অফিসার, প্রিজিাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জায়গায় প্রার্থীদের মধ্যে হামলা মারামারির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। শুধু দিঘলিয়ার যোগীপোল ইউনিয়ন থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া