জোয়ারের পানিতে নষ্ট আমন ক্ষেত, দুশ্চিন্তায় কৃষক 

জোয়ারের পানিতে নষ্ট আমন ক্ষেত, দুশ্চিন্তায় কৃষক 
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি  : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকার কৃষক কাশেম মাঝি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। জমিতে হালচাষ, ধানের চারা এবং চারা লাগানো বাবদ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো।কিন্তু জোয়ারের পানির কারণে তার সে ধানের ক্ষেত পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।একই এলাকার আবুল কালাম আড়াই একর জমিতে আমনের চাষাবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকার মতো। কৃষক নুর ইসলামও ১৫ হাজার টাকা খরচ করে সোয়া একর জমিতে ধানের চারা লাগিয়েছেন। তাদের ক্ষেত এখন ফাঁকা। পানির কারণে ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে।শুধু তারাই নন, কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার কয়েকশ কৃষকের হাজার হাজার একর জমির রোপা আমন ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাদের পরিবারে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে।কৃষক বালুল মিয়ার স্ত্রী সবুরা খাতুন জানান, অনেক কষ্টে ধারদেনা করে তারা পৌঁনে এক একর জমিতে আমন ধানের চারা লাগিয়েছেন। জমিতে সারও দেওয়া হয়েছে। ধানের ক্ষেতে সবুজের সমারোহ ছিলো। কিন্তু মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানির কারণে তাদের ফসলি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষেত থেকে যে ধান পেতেন, তা দিয়ে তাদের কয়েক মাসের সংসার চলতো।  কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকার কৃষক নুর ইসলাম, আজাদ, আব্দুল আলী, খবির, নুর ইসলামসহ অনেকে তাদের ধানের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কথা বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন।তারা জানান, অমাবস্যার প্রভাবে গত কয়েকদিন থেকে মেঘনা নদীতে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এতে নদীর নোনা পানি ঢুকে ধান ক্ষেত তলিয়ে যায়। দিনে দুই বার এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়। এভাবে দীর্ঘ সময় ধানের চারা নোনা পানির নিচে থাকার কারণে পচে বিনষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় নতুন করে চারা লাগালেও কাজ হবে না। জোয়ারের পানি প্রতিনিয়ত লোকালয় এবং জমিতে প্রবেশ করে। পানি নেমে যাওয়ার সময় ধানের চারাও সাথে নিয়ে যায়। চলতি মৌমুমে এসব ক্ষেতে আর কোনো ধানের চারা লাগানো সম্ভব নয় বলে জানান তারা।সরেজমিনে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কমলনগরের বেশ কয়েটি ইউনিয়ন ঘুরে বিনষ্ট ধান ক্ষেত দেখা গেছে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জোয়ার আসার পর ওইসব এলাকার ধানের ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হতে দেখা যায়।চরমার্টিন এলাকার জামাল উদ্দিন, শাহ আলম নামে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এই এলাকার কৃষকরা একেবারে গরিব। ধারদেনা করে তারা জমিতে আমনের চাষ শুরু করেছেন। কেউ এনজিও থেকে ঋণ, আবার কেউ ধানের ওপর দাদন (সুদের বিনিময়ে টাকা) নিয়েছেন। ফসল উঠলে ঋণ পরিশোধ করে গোলায় ধান উঠানোর স্বপ্ন ছিলো তাদের। কিন্তু মেঘনার জোয়ারের পানির কারণে তাদের স্বপ্নও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।  ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিষয়ে কোনো খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি।চরমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী বলেন, নদীর উপকূলীয় এলাকায় তীররক্ষা বাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের পানি খুব সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, স্ব-স্ব ইউপি কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা এবং ক্ষতির পরিমাণের তথ্য দিয়েছে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, পুরো জেলার হিসেবে এটা তেমন কোনো ক্ষতি নয়। তারপরেও সরকারি প্রণোদনা এলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ৮ মাস না পেরোতেই ভাঙন

সিন্ডিকেটের কারনে আলুর দামের উর্ধ্বগতি