১২ নারীকে ‘বিধবা’ বানিয়েছেন তিনি, নিয়েছেন সুবিধা!

১২ নারীকে ‘বিধবা’ বানিয়েছেন তিনি, নিয়েছেন সুবিধা!
নেত্রকোনা প্রতিনিধি : ১২ নারীর জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।অভিযোগ উঠেছে, নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবুল কালাম খান টাকার বিনিময়ে এই অনিয়ম করেছেন। তিনি ১২ নারীর জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সুস্থ ব্যক্তি ও প্রবাসীর নামে প্রতিবন্ধী কার্ড করে নিয়মিত ভাতা উত্তোলন করছেন। এই ইউপি সদস্যকে টাকা না দিলে কেউ সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না।  উপজেলার জাওয়ানী ও ভূগী গ্রামে এখন ৫১ জন নারী বিধবা ভাতা এবং ৫০ জন প্রতিবন্ধী ভাতা উত্তোলন করছেন।
জীবিত স্বামী রেখেও বিধবা ভাতা পাচ্ছেন যারা 
জাওয়ানী গ্রামের এখলাছ উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. নুরজাহান (হিসাব নম্বর ১৬০৪৫), হাসেন আলীর স্ত্রী মোছা. কুলসুমা (হিসাব নম্বর ১৬১৩৪), আলী নেওয়াজের স্ত্রী মোছা. যবেদা (হিসাব নম্বর ১৪৯৫৫), জহর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. রুমেলা (হিসাব নম্বর ১১৫৬৫৩), হাসিম উদ্দিনের স্ত্রী মোছা হালেমা (হিসাব নম্বর ১৪৮০০), আব্দুর রহিমের স্ত্রী মোছা. আছিয়া বেগম (হিসাব নম্বর ৪৫৪), সিদ্দিক খানের স্ত্রী মোছা. রানু বেগম (হিসাব নম্বর ১৫৬৫৪), মরম আলীর স্ত্রী মোছা. মাহমুদা (হিসাব নম্বর ১২৫), বজলুর রহমানের স্ত্রী মোছা. জমিলা (হিসাব নম্বর ৪৯) ও রইছ উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. ফিরোজা (হিসাব নম্বর ৬২) এবং ভূগী গ্রামের নবী হুসেনের স্ত্রী মোছা. জুলেখা (হিসাব নম্বর ৫৮) ও আবু হোসেনের স্ত্রী মোছা. নাসিমা (হিসাব নম্বর ১৬৩২২)।সুস্থ হয়েও যাদের নামে প্রতিবন্ধী ভাতা 
সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েও প্রতিবন্ধীর কার্ড পেয়েছেন জাওয়ানী গ্রামের আবদুল হেলিমের ছেলে প্রবাসী শহিদ খান (আইডি নম্বর ০৩৭২০০১৫৬৫০)। বিদেশে অবস্থান করলেও তার নামে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যরা হলেন আবদুর রহমানের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (আইডি নম্বর ০৩৭২০০১৫৬৩৬), আবদুলল মজিদ খানের ছেলে কামাল খান (আইডি নম্বর ০৩৭২০০১০৩৯৩), হাসেন আলীর ছেলে লাল মিয়া (আইডি নম্বর ০৩৭২০০১০৩৮৯)। তারা প্রত্যেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ বলে জানা গেছে।

টাকা দিয়ে এভাবে কার্ড করে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন নারান্দিয়ার ইউপি সদস্য আবুল কালাম খান। দাবি করেন, ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।  এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগকারী ব্যক্তি বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে আমাকে খুন করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এমন অবস্থায় প্রশাসনিক নিরাপত্তা না পেলে এলাকায় বসবাস করা খুবই কঠিন হবে।নেত্রকোনা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলাল উদ্দিন জানান, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ভাতা কার্যক্রম ইউনিয়ন কমিটিতে ন্যস্ত। ইউপি চেয়ারম্যান ভাতা কার্যক্রম কমিটির সভাপতি, সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী কমিটির সদস্য সচিব এবং ইউপির সব সদস্য ওই কমিটির সদস্য থাকেন।  তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন কমিটি ভাতার তালিকা তৈরি করে উপজেলা কমিটির কাছে পাঠায়। উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান, সহসভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং সব ইউপি চেয়ারম্যান কমিটির সদস্য। তালিকা উপজেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে অনিয়ম বা অভিযোগ পেলে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে বৈধ আবেদনকারীর তালিকা চূড়ান্ত অনুমোদন করে। উপজেলা সমাজসেবা অফিস সেই তালিকা অনুযায়ী ভাতা প্রদান করে থাকে।সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, ওই অভিযোগের বিষয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। কাউকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভাতার কার্ড দেওয়া হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

মাদারীপুরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholders) অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা