স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীন লঞ্চের যাত্রীরা

স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীন লঞ্চের যাত্রীরা
 নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দীর্ঘ ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ৪৩টি নৌপথে নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। এ দিন ভোরে যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকায় অতিরিক্ত লঞ্চও সংযোজন করতে হয়েছে।তবে, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে লঞ্চ মালিক ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচল কর্তৃপক্ষ কঠোর হলেও উদাসীন যাত্রীরা। যাত্রীদের মাস্ক পরা ও সমাজিক দূরত্ব মানতে একটু অনীহা লক্ষ্য করা গেছে।বৃহস্পতিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই সদরঘাট প্লাটুন ছিল যাত্রীদের ভিড়। দেশের ৪৩ রুটে চলাচল করা লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের চাপে অতিরিক্ত লঞ্চ সংযোজন করতে হয়েছে কতৃপক্ষকে। তবে, কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকলেও উদাসীন যাত্রীরা। যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেলেও সঠিক নিয়ম মানছেন না কেউ। অনেকেই মুখের নিচে মাস্ক নামিয়ে রাখতে দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব বার বার প্রচারণা করেও মানানো যাচ্ছে না।এ দিন লঞ্চ মালিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য কাজ করতে দেখা গেছে। টার্মিনালে মাইকে বার বার প্রচার করা হচ্ছে লঞ্চে প্রবেশের সময় যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রেসহ যাত্রীদের মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া অনেক লঞ্চে প্রবেশের সময় যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক দেওয়া এবং শরীরের তাপমাত্রা মেপে যাত্রীদের লঞ্চে উঠাতে দেখা গেছে।  এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক  বলেন, আজ ভোর থেকে বিআইডব্লিউটিএ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে বিশেষ লঞ্জ সংযোজন করা হয়েছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রচারণাসহ পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে টার্মিনালে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে কিনা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে কিনা তা মনিটরিং করছে। এছাড়া সার্ভে সনদ অনুযায়ী যাত্রী নিতে হবে। নির্দেশনা অমান্য করে মাস্ক  ছাড়া যাত্রী পরিবহন করলে ও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়লে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেই লঞ্চ মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।চাঁদপুরগামী লঞ্চ মিতালী-৭ এর কেরাণী মাহবুবুর রহমান  বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশমতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে লঞ্চ ছাড়বো। একই সঙ্গে মাস্ক ছাড়া যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে দিচ্ছি না। লঞ্চের প্রবেশে যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করা হচ্ছে। এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী বসানো হলেও আমরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি না। ভোর যাত্রীদের ভিড় থাকলেএ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় একটু কমেছে। তবে, দূরপাল্লার লঞ্চ বিকেলে ছাড়বে তখন আবার ভিড় বাড়বে। শুক্রবার (১৬ জুলাই) তার দুইদিন পর থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। ফলে আজ বিকেলে যাত্রীদের অনেক চাপ থাকবে।  এ সময় চাঁদপুর থেকে রফ রফ-১ ও সোনার তরী-২ লঞ্চের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোরে চাঁদপুর থেকে দুইটি লঞ্চে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার যাত্রী নিয়ে এসেছে। যাত্রীরা জানায় লঞ্চের ভেতরে ও বারান্দায় তিল পরিমান জায়গা ছিলো না। অনেকেই মাস্ক পরেনি। বার বার লঞ্চে স্টাফরা মাস্ক পরার জন্য মাইকিং করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এভাবে করোনার মধ্যে আসা খুবই রিস্ক, তারপরও অনেকদিন গ্রামে গিয়ে আটকা পড়ে ছিলাম তাই রিস্ক জেনেও ঢাকাতে আসলাম কিছু করার নেই।এমভি গ্রিন লাইনের টিকিট কাউন্টারের কর্তকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, আমরা আজ শুধু টিকিট কাউন্টার পরিষ্কারের জন্য এসেছি। তবে যাত্রীরা টিকিট নিতে এলে তাদের দিচ্ছি। বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে টিকিট বিক্রি হবে। এছাড়া আমাদের অনলাইনে টিকিট বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা এক আসন ফাঁকা রেখে টিকিট দিচ্ছি। আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনেই লঞ্চ পরিচালনা করছি।  গ্রিন লাইনের টিকিট নিতে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী  হারুণ বিশ্বাস। তিনি  বলেন, সরকার একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি ঈদের সময়ের ঝামেলা এড়াতে আগেই টিকিট কাটতে এসেছি কিন্তু এসে শুনি টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। এজন্য আমাকে বলেছে অপেক্ষা করেন যদি কেউ টিকিট বুকিং বাতিল করে তাহলে আপনাকে দিতে পারবো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আমরা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে লঞ্চ ছাড়ছি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে সব লঞ্চ মালিকদের বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করলে কর্তৃপক্ষ যদি কোনো জরিমানা করে তাহলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। আমরা এবার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছি। আশা করছি আমরা আমাদের ওয়াদা রাখতে পারবো। তবে নৌযানে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানানো অনেক কষ্টকর বিষয়। আজ সকালে শুধু চাঁদপুর, ভোলা, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের লঞ্চ ছেড়ে গেছে। বিকেল থেকে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন রুটে আগের রোটেশনে লঞ্চ চলাচল করবে।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন  বলেন, ভোর ৬টা থেকে সকার সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর মধ্যে ভোলা ইলিশা গেছে ২টি, সুরেস্বর, ওয়াবদা রুটে গেছে ৪টি ও বাকিগুলো গেছে চাঁদপুর রুটে। এ পর্যন্ত চাঁদপুর থেকে এসেছে ২টি লঞ্চ।তিনি বলেন, কোভিডের মধ্যে আগেও লঞ্চ পরিচালনা করেছি। তবে যাত্রীরা সচেতন না হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা অনেক কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মাস্ক পরা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী এড়াতে সময়ের আগেই লঞ্চ ছেড়ে দিচ্ছি। সরঘাট টার্মিনাল থেকে নরমালি ১৫০টি লঞ্চ যাতায়াত করে। এরমধ্যে ৮০টি যায় এবং আসে ৭৫টির মতো লঞ্চ। ঈদ মৌসুমে সেখানে যায় ১২৫টির মতো লঞ্চ। আমরা এবার ঈদের আগের দিনের অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ৩০টি অতিরিক্ত বা বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যা প্রয়োজন হলে ছাড়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে মঙ্গবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বিধি-নিষেধ শিথিল করায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নৌযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৩ জুলাই সকাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার ও অন্যান্য) চলাচল বন্ধ থাকবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

মাদারীপুরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholders) অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা