নিজস্ব প্রতিবেদক : মানুষের জন্য ভোজ্য ও প্রাণিখাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহৃত লবণে আয়োডিন না থাকলে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। গতকাল বুধবার ‘আয়োডিনযুক্ত লবণ বিল-২০২১’ সংসদে উত্থাপন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। পরে তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদীয় কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ১৯৮৯ সালের ‘আয়োডিন অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ আইন’ রহিত করে নতুন আইন করতে বিলটি আনা হয়েছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, লবণ আমদানি, উৎপাদন, গুদামজাত, ভোক্তা পর্যায়ে পাইকারি সরবরাহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিশোধন করতে চাইলে এই আইনের অধীনে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন না করলে দুই বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্যাকেট বা লেবেলবিহীন ভোজ্য বা অভোজ্য লবণ বিক্রি করলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় মানমাত্রা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত লবণ উৎপাদনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০ থেকে ৫০ পিপিএম এবং খুচরা পর্যায়ে ২০ থেকে ৫০ পিপিএম মাত্রার আয়োডিন থাকতে হবে। বিলে বলা হয়েছে, একটি জাতীয় লবণ কমিটি থাকবে। এই কমিটি লবণের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিশোধন, আয়োডিনযুক্তকরণ, মজুদ, বিক্রি, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, লবণ কারখানার জন্য আয়োডিন সরবরাহ, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা নীতির বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে। ১৪ সদস্যের কমিটিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব সভাপতি ও বিসিক চেয়ারম্যান সদস্য সচিব হবেন। এই কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে আয়োডিনযুক্ত লবণ পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়ন সেল কার্যক্রমগুলো নজরদারি করবে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সরকার জাতীয় লবণ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লবণ পরিশোধানাগার কারখানার জন্য আয়োডিন সরবরাহ নিশ্চিত করবে। লবণের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উৎপাদনে বিজ্ঞাপনভিত্তিক কৌশল প্রয়োগ, নিরাপদ উৎপাদন-পরিশোধন ও অন্যান্য বিষয়ে উৎপাদনকারী ও পরিশোধনকারীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করবে বিসিক। সরকার প্রয়োজনে লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট করতে পারবে। লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হবে বলেও বিলে বলা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল বুধবার মতিঝিলের বিসিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ এসএমই ফোরামের আয়োজনে হাজার উদ্যোক্তার ডিজিটাল প্লাটফর্ম ‘এসএমই শপ বাংলাদেশ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী। এসময় নূরুল মজিদ বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের বড় শিল্প কারখানা বন্ধ থাকলেও অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ থেমে থাকেনি। এ কারণে দেশের অর্থনীতি এখনও সচল রয়েছে। শিল্পমন্ত্রী এ সময় অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্যে বৈচিত্রতা আনার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, ই-কমার্সের এই যুগে শিল্পখাতে বিল্পব আনতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি বৈচিত্রতা এনে তা ডিজিটাল প্লাটফর্মে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং প্রান্তিক উদ্যোক্তারা করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ যাতে নির্বিঘ্নে পেতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা পর্যায়ক্রমে করেছি। কোভিড-১৯ এর মাঝেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় এবং সরকারের গৃহিত পদক্ষেপে অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। জেলা, উপজেলা থেকে গ্রামপর্যায় পর্যন্ত অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোশতাক হাসান এনডিসি বলেন, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোন্নয়নে সরকার আমাদের যে ভিশন দিয়েছে, তা অর্জনে বিসিক এবং এসএমই উদ্যোক্তা ও ফোরামকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিসিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশ এসএমই ফোরামের উদ্যোক্তাদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। শিল্পমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স মার্কেট প্লেস ‘এসএমই শপ বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন। এরপর শিল্পমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ এসএমই ফোরামের এসএমই পণ্য মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান এনডিসি এবং ইকোনোমিক রিপোর্টস্ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।