অধ্যক্ষ কবির আহমেদ: আজীবন কর্মপ্রিয় শিক্ষাব্রতী এক মানুষের নাম

অধ্যক্ষ কবির আহমেদ: আজীবন কর্মপ্রিয় শিক্ষাব্রতী এক মানুষের নাম

সুদেব কুমার সাহা : শিক্ষা উন্নয়ন ব্যতীত জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি দেশের কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রথমেই দরকার মানব সম্পদের উন্নয়ন। অথচ এদেশে ক্রমেই শিক্ষার উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা যেন নির্দিষ্ট একটা জায়গায় আটকে ছিলো এতদিন। এমনই এক পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা সংকটের কথা বিবেচনা করে কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। আন্দোলন করেন একটি ভালমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার। এই আন্দোলনে যে ক’জন উল্লেখযোগ্য তার মধ্যে অধ্যক্ষ কবির আহমেদ অন্যতম। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষানুরাগীর প্রতিকৃতি। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। শিক্ষিত জাতিগঠনে তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা, গবেষণা, সমাজসেবক, সংগঠক সকল ক্ষেত্রেই তিনি সার্থক। জাতিকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর জন্য রয়েছে তার নিরলস প্রচেষ্টা। সম্প্রতি দৈনিক সমাচারের পক্ষ থেকে এ শিক্ষানুরাগী, মহানুভব সমাজ সংগঠকের একটি সৌজন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। নিম্ন সাক্ষাৎকারটি উপস্থান করা হলো :
অধ্যক্ষ কবির আহমেদরে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : অধ্যক্ষ কবির আহমেদ ১৯৫৮ সালে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত জাঙ্গাঁলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। পিতা কৃষি এবং ব্যবসা উভয় পেশাতেই যুক্ত ছিলেন। তাঁর মাতা একজন ছিলেন গৃহিনী।
শিক্ষা জীবন : অধ্যক্ষ কবির আহমেদ ছোটবেলা থেকেই প্রখর মেধাসম্পন্ন ছাত্র ছিলেন। তিনি জাঙ্গালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারী শিক্ষা শেষ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে কালিগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ন পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৮ সালে কালিগঞ্জ শ্রমিক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে অনার্স ডিগ্রী এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্মজীবন : শিক্ষা জীবন শেষ করেই অধ্যক্ষ কবির আহমেদ সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি ভাগ্যান্বেষণে বিদেশ গমন করেন। তিনি থাইল্যান্ড, হংকং, তাউওয়ান, নেপাল, সিঙ্গাপুর, চীন, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ কোরিয়া বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তবে তাঁর এ প্রবাসজীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বিদেশ আয়েশী জীবন যাপনের কথা ভুলে গিয়ে নিজের দেশের শিক্ষার উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে দেশে ফিরে আসেন অধ্যক্ষ কবির আহমেদ। তিনি উপলব্ধি করতে পারেন শিক্ষার বিকাশ ছাড়া বাঙালি জাতির উন্নতি সম্ভবনয়। তাই তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। ১৯৯২ সালে তিনি ফরিদগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে (বর্তমানে ফরিদগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ) লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। উক্ত কলেজে দীর্ঘ ১৯ বছর অত্যন্ত দক্ষতা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে ২০১০ সালে চাঁদপুর জেলা মতলব থানার অন্তর্গত সুজাতপুর কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে লক্ষীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এ কলেজে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের দিকে তিনি আলহাজ্ব আব্দুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যক্ষের পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সৎ, যোগ্য এবং কর্মপ্রিয় এ মানুষটি অবসর গ্রহণের পরেও বসে থাকেননি। ২০১৮ সারের শেষের দিকে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত শোল্লা আশেক আলী স্কুল এন্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি অধ্যক্ষ কবির আহমেদকে উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের প্রস্তাব করেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সৎ, দক্ষ এবং কর্মপ্রিয় অধ্যক্ষ কবির আহমেদ উক্ত কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। শোল্লা আশেক আলী স্কুল এন্ড কলেজ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জনাব এম. এ. হান্নানের নিজস্ব অর্থায়নে কলেজের সকল ব্যয়ভার বহন করা হয়ে থাকে। এলাকার দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবিস্তারের জন্য সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অধ্যক্ষ কবির আহমেদের অর্জন : অধ্যক্ষ কবির আহমেদ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ২০১৬ এবং ২০১৭ উভয় বছরে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কঁচি কাঁচার মেলা মিলনায়তনে শেরে বাংলা এ, কে ফজলুল হক গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ কবির আহমেদকে শেরে বাংলা স্বর্ণপদক প্রদান করেন। অধ্যক্ষ কবির আহমেদ অসংখ্য গরীব এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়াশুনা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এম এ হান্নান মানব কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে দরিদ্র এবং মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছেন তিনি। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান বিতরণ মাদক বিরোধী ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গঠন, রোভার স্কাউট ও গালর্স গাইড গঠন, টিকাদান কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নসহ অসংখ্যা সেবামূলক কর্মকান্ডের যুক্তি রয়েছেন অধ্যক্ষ কবির আহমেদ। শিক্ষার্থীদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ, মুক্তযুদ্ধ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে প্রবীন মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণের ব্যবস্থাকরণ পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপন কর্মসূচীসহ এলাকাবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কবির আহমেদ।
পরিশেষে কর্মপ্রিয় অধ্যক্ষ কবির আহমেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাওয়া পাওয়ার আর কিছুই নাই। সমাজে যা কিছু কল্যাণকর, সে ধরনের কাজ করে যেতে চাই। শিক্ষা বিস্তার এবং সমাজের উন্নয়নের জন্য বাকী জীবনটা উৎসর্গ করতে চাই্ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জ্ঞান অর্জন করতে হলে পড়াশুনার বিকল্প নাই। দেশে ও সমাজের জন্য কিছু করতে হলে প্রচুর বই পড়তে হবে।
ব্যক্তি জীবনে অধ্যক্ষ কবির আহমেদ বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। তাঁর বড় মেয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিএসইতে অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন এবং ছেলে সবুজবাগ সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম একজন গৃহিনী।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া