ক্রমান্বয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের আবাসন খাত

ক্রমান্বয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের আবাসন খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্রমান্বয়ে আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের আবাসন খাত। যদিও করোনার প্রভাবে আবাসন ব্যবসা কয়েক মাস বন্ধ থাকলেও তা আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। গত দুই মাসে ওই খাতে ২০ থেকে ২৫ ভাগ বিক্রি বেড়েছে। আর ব্যবসা বাড়াতে ব্যবসায়ীরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন। তাছাড়া এক অঙ্ক বা সিঙ্গেল ডিজিটের ঋণ সুবিধা, অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ সুবিধা ও রেজিস্ট্রেশন খরচ কমায় ক্রেতাদের মধ্যেও ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশে আবারো আবাসন খাতের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তাতে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের মতে, করোনার মধ্যে আবাসন ব্যবসা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। তবে বর্তমানে আবারো ফ্ল্যাট বিক্রি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে জমি বেচাকেনাও। আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটিকালে ভয়াবহ ধস নামে আবাসন ব্যবসায়। তখন ফ্ল্যাট বিক্রি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে কিস্তির টাকাও পায়নি। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের নির্মাণ কাজও। এমন সঙ্কটের মধ্যে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অধিক পরিমাণে রাজস্ব আয় ও বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে দেয়া আইনি নির্দেশনায় বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এমন সুযোগ নিতে করদাতাদের জমি, ফ্ল্যাট, বিল্ডিং ও এ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, বন্ড বা অন্য কোন সিকিউরিটিজে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। আর ওই সুবিধা নিতে ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। তাতে কোন জরিমানা নেই। ফ্ল্যাট ও জমি কিনলে আয়তনের ওপর নির্দিষ্ট কর দিলেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রশ্ন করবে না। কারণ তাতে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি কমবে।
সূত্র জানায়, প্রবাসী আয় ও অপ্রদর্শিত টাকার মালিকরাই স্থাবর সম্পত্তি বেশি কেনে। করোনার সময়ে প্রবাসী আয় না কমে বরং বেড়েছে। আর বাজেটে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুবিধা দেয়ায় করোনাকালের মধ্যেই ফ্ল্যাট বিক্রিতে গতি এসেছে। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমে যাওয়ার কারণেও এই খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এখন বিশেষ করে মাঝারি টাইপের ফ্ল্যাট বেশি বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১২ সাল থেকে আবাসন খাতে মন্দা শুরু হয়। পরের বছর টানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ওই সময় ফ্ল্যাটের মূল্য কমিয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান ক্রেতা খুঁজে পায়নি। তাছাড়া কিস্তি দিতে না পারায় অনেক ফ্ল্যাটের ক্রেতা বুকিংও বাতিল করেছে। ওই অস্থির সময় পার করে ২০১৬ সালের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হলেও সঙ্কট কাটেনি। তবে ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণ দেয়ার ঘোষণা আসে। আবার গত বছর নিবন্ধন ব্যয় কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলে করোনার আগে থেকেই আবাসন ব্যবসা ইতিবাচক ধারায় ছিল। তবে করোনার কারণে মাঝে তিন-চার মাসের বেশি সময় ব্যবসা প্রায় বন্ধই ছিল। প্রবাসীদের পাঠানো টাকা ও অর্থনীতিতে থাকা কালো টাকার বাইরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্লট ও ফ্ল্যাট বেশি কিনেছে। করোনাকালে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত কিস্তি শোধ করা ছাড়াও নতুন নতুন প্লট কিনতে দেখা গেছে। কারণ করোনা সঙ্কটে বেসরকারি খাতের ছোট বড় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা না কমে বরং বেড়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, মূলত কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশে ও বিদেশে থাকা সব কালো টাকা এখন ফ্ল্যাট-প্লটে বিনিয়োগ হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেদার ফ্ল্যাট কিনছে। বিশেষ করে এই করোনাকালে ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে আগের চেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে। তার সঙ্গে কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ তো রয়েছেই। কারণ প্রবাসীরা ওসব দেশে টাকা রেখে এখন কোনো মুনাফা পাচ্ছে না। যে কারণে লাভের আশায় তারা বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। তার সঙ্গে ২ শতাংশ প্রণোদনাও পাচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আবাসন খাতের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান শেল্টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ জানান, লকডাউন তুলে দেয়ার পর সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মানুষের মধ্যে ভয়ভীতিও কিছুটা কমেছে। ফলে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ক্রেতাদের মধ্যে অনেক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে জমির মালিকেরাও নতুন চুক্তিতে আসতে শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে আবাসন উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন জানান, একদিকে চাহিদা বাড়ার কারণে বিক্রি বাড়ছে, অন্যদিকে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন প্রকল্পও নিতে শুরু করেছে। রিহ্যাব সদস্যদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রি বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় আবাসন খাত অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর গত জুন থেকেই একটু একটু করে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এখন পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া