স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ জ্যেষ্ঠতার তালিকায় ৪২ জনকে ডিঙিয়ে নারায়ণগঞ্জের কারা তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার দাশকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) করেছে । এ ঘটনাটি কারা মহাপরিদর্শককে জানিয়েছেন কারা অধিদপ্তরে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। এতে অধিদপ্তরের চেইন অব কমান্ড দুর্বল হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির পক্ষে সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামানের সই করা একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের কারা তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার দাশকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে নিয়োগের কথা বলা হয়।
একই প্রজ্ঞাপনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা জ্যেষ্ঠ জেল সুপার (চলতি দায়িত্ব) ইকবাল কবির চৌধুরীকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার (চলতি দায়িত্ব) পদে বদলির কথা বলা হয়েছে।
কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাধীনতার আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে উপমহাপরিদর্শক পদে কর্মরত ব্যক্তিরা কারাগারের দায়িত্ব পেতেন। স্বাধীনতার পর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার পদ তৈরি করা হয় এবং তাঁদের হাতে কেন্দ্রীয় কারাগারগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছাড়া হয়।
২০১৯ সালের ২ জুলাই কারা অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণির পদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। ওই তালিকায় চলতি দায়িত্বে নয়জন সিনিয়র জেল সুপার রয়েছেন।
চিঠিগুলোয় লেখা হয়েছে, জেল সুপার পদে পাঁচ বছর চাকরি করার পর সিনিয়র জেল সুপার পদে পদোন্নতির বিধান আছে। কারা অধিদপ্তরে জেল সুপার পদে পাঁচ বছর সময় অতিক্রম করা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তা আছেন। চার থেকে পাঁচ বছর ধরে জেল সুপার পদ থেকে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কেবল চলতি দায়িত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদায়ন করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও লিখেছেন, চলতি দায়িত্ব দেওয়ার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকার পরও তা মানছে না কারা অধিদপ্তর। এতে কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে কারা অধিদপ্তরের ৪৩ নম্বর জেল সুপারকে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে তাঁর চেয়ে জ্যেষ্ঠ ৪২ জেল সুপারের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই দীর্ঘদিন সিনিয়র জেল সুপারের চলতি দায়িত্বে থাকা জেল সুপাররা বঞ্চনার মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে ৪২ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে ৪৩ নম্বর কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠ জেল সুপারের পদে পদায়ন করা হলে কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও বঞ্চনা বাড়বে এবং ‘চেইন অব কমান্ড’ দুর্বল হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অধিদপ্তরে গিয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, কারা অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিনিয়র জেল সুপারের নিয়মিত পদে কেউ নেই। সবাই চলতি দায়িত্বে আছেন। এসব জটিলতার কারণেই অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার পদে দেওয়ার অর্থ হলো যেকোনো সময় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া যাবে।