রুপালি ইলিশের সরবরাহ থাকলেও দাম কমছেনা

রুপালি ইলিশের সরবরাহ থাকলেও দাম কমছেনা

রাজশাহী: নদীতে প্রতিদিন ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।

তাই সরবরাহও বেড়েছে। সকাল হলেই বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে ট্রাকে করে আসছে বড় বড় রুপালি ইলিশ। এরপরও রাজশাহীর বাজারে ইলিশের দাম কমছে না! তাই বাজারে দরদাম করেই বাড়ি ফিরছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। অধরাই থেকে যাচ্ছে রুপালি ইলিশ। মনে চাইলেও সবাই সুস্বাদু ইলিশের স্বাদ মুখে নিতে পারছেন না। পাশের বিত্তশালীর বাড়ির ইলিশ ভাজার সুবাস নিয়েই আপাতত সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত মানুষদের।

রাজশাহী মহানগরের সাহেব বাজার এলাকার মাছপট্টিতে শনিবার (২৯ আগস্ট) সকালে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন শিরোইল এলাকার আবদুল মালেক।

আক্ষেপের সুরে তিনি  বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। পদ্মা ও মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু দাম কমেনি। আগামী অক্টোবরে থেকে আবারও ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকবে। তাই আরও এক মাস বাজারে ইলিশ মাছের প্রাচুর্য থাকবে।

কিন্তু বাজারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না যে, এবছর ইলিশের দাম আর কমবে। আগেও যেই দাম ছিল, ভরা মৌসুমেও সেই দাম! বরং এখন একটু বড় সাইজের ইলিশ পাওয়া যাওয়ায় ক্ষেত্র বিশেষ দাম আরও বেশি হাঁকা হচ্ছে। এককেজি ওজনের একটি ইলিশের স্বাদ নিতে হলে এক হাজার দুইশ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর সবচেয়ে ছোট (৪.৫০ গ্রাম) ওজনের একটি ইলিশ কিনতে গেলেও তা পাঁচশ টাকার নিচে নয়। এ অবস্থায় সবার পক্ষেই বাজারে গেলেও ইলিশ কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

শফিকুল আলম নামে আরেক ক্রেতা  বলেন, ইলিশের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে। এটাই সাধারণত হয়ে থাকে। কিন্তু এবার সবকিছুই যেন ব্যতিক্রম। ইলিশ ব্যবসায়ীরা যেন সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যে কারণে সব বাজারেই একই দামে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে।

বাজার ঘুরে ইলিশের দামের কোনো হেরফের লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যারা একটু কম দামের আশায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে ঢুঁ মারছেন তারাও দামের ব্যাপারে হতাশ হচ্ছেন।

এজন্য সাধারণ ক্রেতারা ইলিশের বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতাদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বলেও জানান শফিকুল আলম।

এদিকে ইলিশের খুচরা বাজারের মত শনিবার সকালে রাজশাহীর নিউমার্কেট এলাকায় গিয়েও দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।

যেখানে সকালে ইলিশ কেনাবেচা নিয়ে সরগরম হয়ে থাকে। সেখানেই ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সমাগম কম। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে এখানে মিনি ট্রাকে করে ইলিশ মাছ আসে। এখান থেকেই পাইকারি দরে ইলিশ কেনেন মাছ ব্যবসায়ীরা। নিলামে হাঁকডাকের পরে সর্বোচ্চ দরদাতার হাতে চলে যায় ইলিশের ঝাঁপি। সেখান থেকে আড়ত হয়ে চলে যায় মহানগরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে।

সেখানে দেখা যায় ৪ থেকে সাড়ে ৪শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে, ৫শ টাকা কেজি, ৫শ গ্রাম থেকে ৬শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকায়, ৭শ গ্রাম থেকে ৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮শ থেকে ৯শ টাকায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ২শ টাকা, আর এর ওপরে থাকা বড় সাইজের ইলিশ মাছগুলো এক হাজার ৬শ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় সাইজের ইলিশ নিতে হলে একদিন আগেই এই আড়তে গিয়ে অর্ডার দিয়ে আসতে হবে।

আলী হোসেন আলী নামে এক খুচরা বিক্রেতা  বলেন, এখন খুচরা ও পাইকারি বাজারে দামের কোনো তারতম্য নেই। দাম প্রায় একই। তবে যারা সরাসারি পাইকারি বাজার থেকে ইলিশ কিনবেন তারা ছোট ও বড় সাইজের মাছ মিলিয়ে নিতে পারবেন। এতে বেশি মাছ নিলে ছোট মাছের সঙ্গে কয়েকটা বড় সাইজের মাছও পাবেন। খুচরা বাজারে সেই সুযোগ নেই। কারণ এখান থেকে মাছ নিয়ে তারা বড় মাছগুলো সাইজ অনুযায়ী বাছাই করে ফেলেন এবং সেগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রি করেন। এজন্যই সেখানে ওজন হিসেবেই ইলিশ মাছের দাম নির্ধারণ করা হয়।

রাজশাহীর নিউমার্কেট ষষ্টিতলা এলাকার মাছ ব্যবসায়ী জুম্মন আলী বলেন, পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরা পড়লেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সবসময় মাছ শিকারে যেতে পারছেন না। তাই যেভাবে বলা হচ্ছে ঠিক সেভাবে ইলিশ ধরা পড়ছে না। এজন্য মোকামেই ইলিশের দাম বেশি।

আর ওই মাছ মিনি ট্রাকের করে রাজশাহী এনে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না কারও পক্ষেই। এজন্য পাইকারি ও খুচরা বাজারে ইলিশের দামে তেমন কমবেশি নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মাছের আড়তদার সেলিম হোসেন বলেন, ঈদের পর ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন ৩/৪টি মিনি ট্রাকে ইলিশ আসছে বরিশাল থেকে। কিন্তু নিলামের পর কয়েক হাত ঘুরে তারপরই আসছে। ফলে এখানে ওজন ভেদে এমনিতেই কেজিপ্রতি মাছ ৫০ থেকে ১শ টাকা দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন ওই আড়তদার।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন