সিভিএফ এবং কমনওয়েলথের একসঙ্গে কাজ করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতি এবং অবদানের ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ দেশগুলোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।সিভিএফের এক-তৃতীয়াংশ দেশ কমনওয়েলয়েরও সদস্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে অনুঘটক হিসেবে সিভিএফ এবং কমনওয়েলথ এক সঙ্গে কাজ করতে পারে।সিভিএফ এবং কমনওয়েলথের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতার জন্য ৬টি সুপারিশ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।প্রথম সুপারিশে শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই, সবুজ এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান অর্জনে জ্ঞান, গবেষণা, সক্ষমতা তৈরি এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।দ্বিতীয় সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নত দেশগুলোর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সবাইকে সম্মিলিত অবস্থান নিতে বলেন। এ ক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত অবস্থান জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।তৃতীয় সুপারিশে জলবায়ু অভিবাসী ইস্যুতে কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, নদী ভাঙন, বন্যা এবং খরার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে জলবায়ু অভিবাসীরা তাদের পৈত্রিক ভিটে-মাটি, ঐতিহ্যগত পেশা হারাচ্ছে। এই মানুষগুলোর পুনর্বাসনে বৈশ্বিক দায়িত্ব রয়েছে।চতুর্থ সুপারিশে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সবার ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ প্রধান গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলোকে তাদের উচ্চাভিলাসী এবং অ্যাগ্রেসিভ এনডিসিএস ঘোষণা করাতে একটি চাপ হিসেবে কাজ করতে পারে।পঞ্চম সুপারিশে শেখ হাসিনা জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সহনীয় খরচে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন টেকনোলজি হস্তান্তর করার কথা বলেন।অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড।জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৬) যোগ দিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে রোববার (৩১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে গ্লাসগোতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।গ্লাসগোতে অবস্থানকালে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সোচ্চার ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৬ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব এবং রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের বক্তব্যের সেশন ছাড়াও সাইড লাইনে অনেকগুলো ইভেন্টে অংশ নেবেন।পাশাপাশি শেখ হাসিনা বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।গ্লাসগোতে অবস্থানের দিনগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপক্ষে, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটসের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিয়ন, ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর স্কট মরিসন, স্কটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার অ্যালিসন জনস্টোনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।গ্লাসগো সফর শেষে বুধবার (০৩ নভেম্বর) দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে লন্ডন যাবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ শেষে ০৯ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে দ্বিপাক্ষিক সফরে প্যারিস যাবেন তিনি।প্যারিস সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিন ক্যাটেক্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।এছাড়াও ফ্রান্স সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কো সদর দপ্তরে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ বিতরণ অনুষ্ঠান এবং ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।আগামী ১৪ নভেম্বর দেশে ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।