কলকাতা: দশকের পর দশক ধরে বাঙালি জাতির শিল্প-সাংস্কৃতির আদান-প্রদানের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত কলকাতা বইপাড়ার কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস। বর্তমানে তার সারা শরীরে বয়সের ছাপ।চাকচিক্য খসে গিয়ে মলিন চেহারা এখন। বৃষ্টিতে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে।বহু বছর ধরে নতুন রঙের প্রলেপ না পড়ায় দেওয়ালগুলিও বিবর্ণ। নড়বড়ে চেয়ার-টেবিলের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। তার ওপর বছর দেড়েকের বেশি সময় বন্ধ ছিল কফি হাউস। ফলে এক ধরনের সঙ্কট ঘনিয়েছে এখানকার কর্মীদের জীবনে।তবুও তাদের আবদার একটাই, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজও টিকে থাক। আর তাই সেদিনের আদলে আভিজাত্য ফেরাতে, কফি হাউসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মমতার সরকার। ইন্ডিয়ান কফি ওয়ার্কার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে একটি সমবায়ের হাতে অর্থ তুলে দেবে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন সূত্রে এই খবর জানা গেছে।করোনা, তাই মান্নাদের স্মৃতি বিজড়িত কফি হাউসে এখন আর বসে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা। হয় না লেখক কবিদের তথ্যের আদান-প্রদান। তাই কফির পাতিল সেভাবে চুলায় ওঠে না। ফলে এখানকার কর্মীরা বছর দেড়েক ধরে কেউই পুরো সময়ের বেতন পাননি। প্রভিডেন্ট ফান্ডের সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাতে গিয়ে অনেকে ক্রমশ আর্থিক নিশ্চয়তা খুইয়েছেন। তা সত্ত্বেও শত মানুষের গুঞ্জন আর বইপাড়ার কফির কড়া গন্ধ এই মায়াবি আবেদন শহরবাসীর জীবন থেকে হারিয়ে যাক, চান না কফি হাউসের কর্মীরা। সে কারণে কর্তৃপক্ষ মমতার সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।মুখ্যমন্ত্রী তরফে তাদের জানানো হয়েছে, কোনো মতেই হারানো যাবে না কফি হাউসের ঐতিহ্য। যেমনটা হাজারো ঝঞ্জায় টিকে আছে কলকাতার ট্রাম। তাই শিগগিরই আশির দশকের পুরনো কফি হাউসের হাতে রাজ্য সরকার প্রথম কিস্তিতে তুলে দেওয়া হবে ১০ লাখ রুপি। কফি ওয়ার্কার্স কো-অপারেটিভের সম্পাদক তপণ কুমার পাহাড়ি বলেছেন, টাকা এলেই সবার আগে আমরা পুরনো ছাদ মেরামত করব। ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে হবে। পুরো হাউস রং করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু চেয়ার-টেবিল নতুন করতে হবে, কিছু মেরামত করা হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আরও কিছু পরিবর্তন করবো। তাছাড়া বর্তমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হোম ডেলিভারি পরিষেবা চালু করার ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা করছি।রাজ্য সরকারের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেছেন, কফি হাউস কলকাতার একটি ‘সিগনেচার’। তাই সরকার তাদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগিরই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষর হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হবে।কফি হাউসের এক কর্মী বলেছেন, করোনা তো একদিন শেষ হবেই। আবার খুলবে স্কুল, কলেজ, লোকাল ট্রেন। আবার সচল হবে কলকাতার বইপাড়া। ফলে আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে এই কফি হাউস। তবে বর্তমান শহর কলকাতায় শ’য়ে শ’য়ে আছে ঝাঁ চকচকে ক্যাফে শপ এবং রেস্তোরাঁ। সেখানে বসেই কফিতে চুমুক দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বর্তমান প্রজন্ম। কফি হাউসের নস্টালজিয়া আদৌ তাদের কতটা টানে, তা নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে। ফলে এর ঐতিহ্য না পাল্টে, নতুন ঢঙে কফি হাউসকে ফিরিয়ে দেওয়াই এখন কর্তৃপক্ষর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।