ভারতে অবস্থানকালে বাংলাদেশিদের ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হলে যে জরিমানা গুনতে হতো তার পরিমাণ কমিয়েছে ভারত। এই জরিমানার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি মুসলিম ধর্মাবলম্বী ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের ছিল ব্যাপক বৈষম্য।
নতুন নিয়মে সেই বৈষম্য আর থাকলো না।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বাংলাদেশি মুসলমানের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারতে থাকলে, ওভার স্টে বাবদ ব্যক্তিটিকে দিতে হতো মোটা অঙ্করে জরিমানা। তবে মুসলিম সম্প্রদায় বাদে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান অথবা জৈন ধর্মের হলে একই দোষে তাকে জরিমানা গুনতে হতো অনেক কম। এই নিয়মের আমুল পরিবর্তন ঘটলো বাঙালি উৎপল রায়ের সহযোগিতায়।
২০১৮ সালে তৈরি হওয়া নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশি মুসলমান ব্যক্তির ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১ দিন থেকে ৯০ দিন ভারতে ওভার স্টে হলে মাথাপিছু জরিমানা গুনতে হতো ৩০০ ডলার। অপরদিকে অন্য সম্প্রদায় হলে পড়তো ১০০ রুপি। আবার ৯১ দিন থেকে দুই বছর এবং দুই বছরের বেশি ওভার স্টে হলে যথাক্রমে জরিমানা পড়তো ৪শ ও ৫শ ডলার। অন্য সম্প্রদায় হলে তা পড়তো ২শ ও ৫শ রুপি।
তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগী, শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ভারতে অবস্থানের নির্দিষ্ট কারণ জানালে বিষয়টা ভিন্ন। সেক্ষেত্রে জানাতে হবে ফরেনার রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে (এফআরআরও)। সংশ্লিস্ট দপ্তর নির্দিষ্ট বিষয়ে সঠিক কারণ বুঝলে সেই অনুপাতে মেয়াদ বাড়ায়।
তবে এই নিয়ম শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়। একই নিয়ম বর্তাতো আফগানিস্তান ও পাকিস্তানিদের জন্যও। কিন্তু এই জরিমানার আমূল পরিবর্তন ঘটালেন বাঙালি ব্যক্তি উৎপল রায়। এর জেরে নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায় নয়, বর্তমানে তিনটি দেশের সব নাগরিকদের জন্য একই পরিমাণ জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ৫শ রুপি, ১৬ দিন থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত ৫ হাজার রুপি, ৯১ দিন থেকে দুই বছর পর্যন্ত ১০ হাজার রুপি ও দুই বছরের বেশি পর্যন্ত ভারতীয় রুপি জরিমানা ধার্য হয়েছে কুড়ি হাজার রুপি।
এ বিষয়ে ‘দি বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র বিপণন সচিব উৎপল রায় বলেন, বাংলাদেশ শুধু আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নয়, বাংলাদেশ আমাদের ভাতৃপ্রতীম ও বন্ধুরাষ্ট্র। বছরজুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বর্ষপূর্তি চলছে। আমি জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও আমার বাবা চট্টগ্রাম ও মায়ের জন্মস্থান ছিল চাঁদপুরে। ফলে আমার গায়ে বাংলাদেশের রক্ত আছে। বিষয়টি আমার নজরে পড়ে।
তিনি বলেন, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কীভাবে এমন কাজ করে? তা জানতে তিনটি চিঠি পাঠাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছিলাম ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তাই সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে নিরপেক্ষভাবে বিষয়টির গুরুত্ব দিক এবং বিবেচনা করে জরিমানার পরিমাণ আবার নতুনভাবে ঠিক করা হোক।
আমি আনন্দিত ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি বিবেচিত করেছে এবং চলতি বছর থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে জরিমানার পরিমাণ অনেক শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। যা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।