নিজস্ব প্রতিবেদক : আমরা এত অমানবিক নই যে রোহিঙ্গাদের বিপদে ফেলব। অন্য কেউ তো তাদের নিতে আসেনি, আমরাই তাদের আশ্রয় দিয়েছি। ভাসানচরের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আবদুল মোমেন। গতকাল সোমবার সকালে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের একথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাসানচর নিয়ে আন্তর্জাতিক এজেন্সির সাপোর্ট পাচ্ছি। রোহিঙ্গারাও ভাসানচরে যেতে আগ্রহী। কুতুপালং এ কাজ করার সুযোগ ছিল না। তবে মিয়ানমারে তারা মাছ ধরা, কৃষিকাজসহ যে ধরনের কাজ করতো সে ধরনের কাজ তারা ভাসানচরে করতে পারবে। এতে সন্ত্রাসী হওয়ার সম্ভাবনা কম। দেশে রোহিঙ্গাদের জন্য চলমান কাজগুলো ক্ষণস্থায়ী জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুতুপালং এ পাহাড় ধস হয়েছিল। মানুষ মারা গিয়েছিল। আমাদের ভয় সামনের মৌসুমগুলোতে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২২/২৩ হাজার পরিবারকে ওখানে (ভাসানরচ) স্থানান্তর করবো। কুতুপালং এ কাজ করার সুযোগ ছিল না। তবে মিয়ানমারে তারা মাছ ধরা, কৃষিকাজসহ যে ধরনের কাজ করতো সে ধরনের কাজ তারা ভাসানচরে করতে পারবে। এতে সন্ত্রাসী হওয়ার সম্ভাবনা কম। আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রথমে আমরা ১৬৪২ জনকে ভাসানচরে নিয়ে গেছি। তবে তা অনেক দীর্ঘায়িত হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেখানে যেতে চায়নি। তারা ভাসানচরকে ভাসমান বলে ইস্যু করেছে। তবে আমরা মঙ্গল চাই বলে তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাড়ে ৩ বছরেও একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। আমরা আশাবাদী তারা যাবে। তারা না গেলে আমাদের বিপদ। অনেক দিন ধরে এতগুলো মানুষ থাকলে নানা রকম ষড়যন্ত্র হবে। এদের মধ্যে যদি সন্ত্রাসী তৈরি হয় আমাদের জন্যও ক্ষতিকর মিয়ানমারের জন্যও ক্ষতিকর। এটি ভারত, চীন এবং জাপানও বুঝে। ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গারা অন্য রোহিঙ্গাদের যেতে উৎসাহিত করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শুরুতে ভাসানচর নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনীহা থাকলেও এখন যারা গেছে তারা অন্যান্যের যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। যার কারণে আন্তর্জাতিক অনেক এজেন্সির সাপোর্ট পাচ্ছি। যে কেউ এসে দেখে যেতে পারবে। আপাতত ভাসানচরের ঘরবাড়িতে রোহিঙ্গাদের রাখা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে দু’টি সম্পদ রয়েছে, একটি হলো মানুষ অন্যটি নদী-নালা-খাল-বিল। এ দু’টি সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। মন্ত্রী বলেন, ইতিহাসের মহামানব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ ঘরে জন্ম নিয়েও মানুষের জন্য, জাতির জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন। যে কারণে তাকে ২৩টি বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছিলো। তিনি প্রত্যয়ী এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। জাতিকে তিনি পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার ইচ্ছে শক্তির কারণে তা সম্ভব হয়েছিলো। মন্ত্রী জানান, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ হতে হবে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে জিপিএ বাড়ালে হবে না। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। এজন্য নিজের ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডের জিডিপির অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে পর্যটন শিল্প। কিন্তু আমাদের দেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এত সুন্দর হওয়ার পরও আমাদের পর্যটন শিল্প অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের দেশে একটি সমস্যা চাকরি। চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে চাকরির বাজার কিভাবে সৃষ্টি করা যায় তার দিকে নজর দিন। নিজের হাতে থাকা ডিজিটাল ডিভাইসটাকে (অ্যান্ড্রয়েড সেট) কাজে লাগান। সরকার বর্তমানে শিক্ষা খাতে বাজেটের হার বাড়িয়েছে। আগে শিক্ষার জন্য আট হাজার কোটি টাকা বাজেট থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৮০ হাজার কোটি টাকায় উন্নতি করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ বাজেট প্রযুক্তির বিকাশ করার জন্য। আপনি যদি আপনার ইচ্ছে শক্তিতে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন তাহলে লোক আপনাকে কালান্তরে মনে রাখবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে তরুণদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা আগামী ১৫ বছর পর্যন্ত বাড়বে। এ উপযুক্ত সময়ে তরুণ সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। বক্তব্যের শুরুতে তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারবর্গ, দেশের জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, রাঙামাটি ৩০৫ পদাদিক ডিভিশনের ব্রিগেড কমান্ডার ইফতেকুর রহমান (পিএসসি), রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ এবং রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম নেজামী। বক্তব্য শেষে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২১ এর শুভ সূচনা করেন অতিথিবর্গ। এ অ্যাডভেঞ্জারে বিভিন্ন ইভেন্টে ১০০ জন প্রতিযোগী (১৮-৩৫ বছর) অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি জেলা থেকে ২০ জন, খাগড়াছড়ি থেকে ১৫ জন, বান্দরবান থেকে ১৫ এবং বাকি ৫০ জন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে। ১১ জুন-১৫ জুন পর্যন্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।