ইরফানের পক্ষে সাফাই গেয়ে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন

ইরফানের পক্ষে সাফাই গেয়ে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক  : ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে, সাসপেন্ড হওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের ‘শয়নকক্ষ’ থেকে র‌্যাব যে পিস্তলটি উদ্ধার করেছিল, সেটি আসলে সেখানে ছিল না বলে পুলিশের তদন্তে জানানো হয়েছে।
ওই ঘটনায় করা মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অস্ত্রটি ভবনের অতিথি কক্ষে পাওয়া গিয়েছিল। ইরফান সেলিমের ‘রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য’ কেউ সেটি তার অতিথি কক্ষে রেখেছিল। তবে তদন্তে অস্ত্র রাখা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায়নি।
এসব তথ্য উল্লেখ করে গত রোববার লালবাগ থানা পুলিশ অবৈধ অস্ত্র আইনে র‌্যাবের করা মামলায় ইরফান সেলিমকে ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে অন্য একটি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ইরফানের দেহরক্ষী জাহিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। গত ২৫ অক্টোবর রাতে ধানমন্ডিতে হাজী সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। পরদিন ওই ঘটনায় ইরফানসহ আরও চারজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় দু-তিনজনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। ২৬ অক্টোবর পুরান ঢাকায় হাজী সেলিমের বাসভবন ‘চাঁন সর্দার দাদাবাড়ী’তে দিনভর অভিযান চালায় র‌্যাব। অবৈধ ওয়াকিটকি ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় ইরফানকে দেড় বছর ও তার দেহরক্ষীকে এক বছরের কারাদন্ড দেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই বাসা থেকে ‘পিস্তল, এয়ারগান ও গুলি’ উদ্ধারের ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে অস্ত্র আইনে ইরফান সেলিমকে আসামি করে লালবাগ থানায় মামলা করা হয়। ওই ঘটনার পর ইরফানকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়।
ওই মামলায় র‌্যাব উল্লেখ করেছিল, অভিযান চলাকালে বাদী ওই বাড়ির চতুর্থ তলায় ইরফান সেলিমের ব্যক্তিগত শয়নকক্ষে তল্লাশি চালিয়ে পিস্তল, গুলি, ম্যাগাজিন ও বিয়ার পেয়ে জব্দ তালিকা তৈরি করে।
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার পরিদর্শক মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মামলাটির গোপন ও প্রকাশ্য তদন্ত, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং ঘটনাস্থলের জব্দ তালিকা বিশ্নেষণ করা হয়েছে। সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, মামলার এজাহার ও জব্দ তালিকায় ঘটনাস্থল অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের শয়নকক্ষ উল্লেখ করা হলেও সেটি তার শয়নকক্ষ নয়, অতিথিকক্ষ। ঘটনাস্থলের বাড়িটির মালিক ইরফান সেলিমের বাবা হাজী মোহাম্মদ সেলিম ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য। পুরো পরিবার একটি রাজনৈতিক পরিবার বলে ওই অতিথিকক্ষে আগন্তুক অতিথি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী আসেন। তা ছাড়া অভিযুক্ত ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ায় এলাকার সাধারণ জনগণও আসেন তার সঙ্গে একান্তে দেখা-সাক্ষাৎ করতে।
অভিযুক্ত ইরফান সেলিম ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কানাডায় বিবিএ পড়াশোনা শেষ করেছেন উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্টে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ইরফান সেলিম ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্যের উত্তরসূরি। তাই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট এবং সমাজে তার মানসম্মান ক্ষুণ্ণ ও হেয়প্রতিপন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে কে বা কারা মামলায় জব্দ করা অস্ত্র, পিস্তলটি ২৬ নং ‘চাঁন সর্দার দাদাবাড়ী’র চতুর্থ তলার অতিথি কক্ষে রেখেছেন তার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের ইতিবৃত্ত পর্যালোচনায় এলাকায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, এ মামলার জব্দ করা আলামত পিস্তলের বিষয়ে মামলার বাদী এজাহারে ও জব্দ তালিকায় কার অস্ত্র এবং কার দেখানো মতে জব্দ করা হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি। মামলার প্রকাশ্য ও গোপন তদন্তে, গৃহীত সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাই মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহিত দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থলে যা পাওয়া গেছে, তাই এজাহারে সন্নিবেশিত করা হয়েছিল।
তদন্ত সংশ্নিষ্ট পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জব্দ করা পিস্তল, গুলি ও এয়ারগান সিআইডিতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। ওই প্রতিবেদনে পিস্তলটিকে স্থানীয়ভাবে তৈরি পিস্তল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গুলি তাজা উল্লেখ করা হলেও সেটি এয়ারগান অস্ত্র নয় বলে মতামত দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, অস্ত্র মামলায় ইরফান সেলিমকে দায় মুক্তি দেওয়ার আবেদন করা হলেও নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলছে। এ মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন