আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা মে দিবস নামেও পরিচিত । প্রতি বছর মে মাসের ১ তারিখে সারা বিশ্বব্যাপী দিনটি উদযাপিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করে থাকে।
আজ মে দিবস নিয়ে লিখেছেন আরিয়া তাবাসসুম হক আইয়ানা। সে রাজধানীর মগবাজারের এজি চার্চ স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি সে গান, ছবি আঁকা, আবৃতি, এলোহা, কারাতে এবং লেখালেখি করতে পছন্দ করে। বড় হয়ে সে একজন নভোচারী হতে চায়। নিচে মে দিবস নিয়ে তার লেখাটি তুলে ধরা হলো-
আজ মে দিবস। শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। বিশেষ শ্রমজীবী, মেহনতী মানুষের ঐক্য, সংহতি, সংগ্রাম এবং বিজয়ের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছিল ইতিহাসের এই দিন। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় মালিকপক্ষ শ্রমিকদেরকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৬ ঘন্টা এবং সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতে বাধ্য করত। যার বিনিময়ে শ্রমিকরা খুবই নগণ্য মজুরি পেত। প্রতিবাদ করলেই নির্যাতনের খর্ব নেমে আসতো শ্রমিকদের উপর।
এইভাবে নির্যাতন নিপীড়নের মধ্যে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিল শ্রমিকেরা। ফলে অনিবার্যভাবে একসময় দানা বাঁধতে শুরু করে শ্রমিকদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। অবস্থা বদলাতে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে। দাবি বাস্তবায়নে ১৮৮৬ সালের পহেলা মে সময় বেঁধে দেয় শ্রমিকরা।
কিন্তু মালিকপক্ষ দাবি না মানায় কাজ রেখে শ্রমিক সংগঠন International workingmen’s Association এর ডাকে ১৮৮৬ সালের পহেলা মে শনিবার পুরো আমেরিকা জুড়ে পালিত হয় শ্রমিক ধর্মঘট। এই ধর্মঘটে শ্রমিকদের মূল দাবি ছিল আট ঘন্টা কাজ, ৮ ঘন্টা বিশ্রাম এবং আট ঘন্টা বিনোদন।
এর তিনদিন পর শিকাগোর হেই মার্কেটে প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক জড়ো হয়। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের গুলিতে প্রায় ১০ থেকে ১২ জন প্রাণ হারান, আহত হন আরো অনেকে। পরের বছর পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে আরো ছয় জন শ্রমিককে ফাঁসি দেয়া হয়। ১৮৮৬ সালের মে মাসের ১ থেকে ৪ তারিখের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই রক্তাক্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের স্বীকৃতি পায়। ১৮৮৯ সালের ১৪ ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১মে দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী বছর ১৮৯০ সাল থেকে দিনটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে “মে দিবস” বা “আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস” হিসেবে। বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশ মে দিবসকে সরকারি ছুটি হিসেবে উদযাপন করে।