নিউজ ডেস্ক : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, সঠিক তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং গঠনমূলক সমালোচনা যেমন একটি গণতন্ত্র, দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য। একইভাবে তথ্যের বিপরীতে অপতথ্য সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।যখন সমাজ ধ্বংস হবে তখন আমি আপনি কেউই কিন্তু রেহাই পাব না। তিনি বলেন, তাই আমাদের সম্মিলিতভাবে একটি দায় আছে, কীভাবে আমরা অপতথ্য রোধ করতে পারি? এবং কীভাবে আমরা তথ্যের প্রবাহ আরও নিশিত করতে পারি। কিন্তু এ তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কোনো কাটাছেঁড়া করতে চাই না।শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্সে এসব কথা বলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।তিনি বলেন, সাংবাদিক সমাজ ও সাংবাদিকতার জন্য চমৎকার একটি পরিবেশ বাংলাদেশে তৈরি করতে চাই। আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এ দেশ বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার মুক্তগণমাধ্যম, চমৎকার পরিবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে এবং জাতির উপকারে আসে, সে বিষয়গুলোকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই।তিনি বলেন, আমরা কিন্তু তথ্য প্রবাহ অবাধ করতে চাই। সঠিক তথ্য দেওয়ার বিষয়গুলোকে আমরা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে চাই। সে সঙ্গে রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট বাস্তবে আরও বেশি নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা জানেন আমাদের দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক ইতিহাস আছে যে কারণে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যারা যুক্ত থাকেন তাদের অনেকে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা অনীহা প্রকাশ করেন। এটি একটা কালচারাল বিষয়। তো আমাদের শুধু আইন করলেই হবে না, কাজে লাগাতে হবে।তিনি বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আমরা একটি বার্তা দিয়ে দিয়েছি। আমরা চাচ্ছি রাইট টু ইনফর্মেশন অ্যাক্ট আরও সুদৃঢ় এবং শক্তিশালী করতে। কেউ যদি তথ্য চায় তবে অবশ্যই তাকে দিতে হবে। কারণ সরকারের বিভিন্ন তথ্য যদি জনগণ চায় তবে সেটা দিতে আমরা বাধ্য। কারণ তথ্য চাইতে গেলে কারোর বিব্রত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা তথ্য দিতে চাই।তিনি বলেন, যখনই তথ্য না থাকে তখনই অপপ্রচারের সুযোগ তৈরি হয়। এ অপপ্রচার যাতে সুযোগ করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনিক বেশ কিছু কাজ আমি করতে যাচ্ছি। যাতে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সঠিক তথ্য আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এবং আপনারাও তার জনগণের কাছে দিতে পারেন।তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট রয়েছে। সেটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনেই পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য সে তহবিলে একটি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এটি ব্যাংকে রাখা হয়েছিল এবং সিটি বাড়তে বাড়তে প্রায় ৬০ কোটি টাকার মতো হয়ে গেছে। আমরা প্রতিবছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আলাদা ছয় কোটি টাকা অনুদান নিয়ে আসি। সেখান থেকে ২ কোটি টাকা আমি বিতরণ করেছি। কিন্তু সেই তহবিলের টাকায় এখনো হাত দেওয়া হয়নি। সেটি সেভাবেই রয়েছে। সাংবাদিকতা পেশায় যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকে অর্থনৈতিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন অথবা অন্য কোনো সমস্যায় পড়ে যান তাহলে সরকারিভাবে আমরা তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করে থাকি।তিনি বলেন, আমাদের একটিই উদ্দেশ্য, সাংবাদিকতা থাকবে, গণমাধ্যম থাকবে, মুক্ত আলোচনা থাকবে, মুক্ত সাংবাদিকতা হবে। সরকার এবং অথরিটি ভুল-ভ্রান্তি থাকলে ব্যর্থতা থাকলে সেগুলোও সমালোচনা হবে। শুধু আমি সরকারের পক্ষ থেকে এটুকু বলতে চাই অসত্য, অপতথ্য ব্যবহার করে কোনো সমালোচনা বা নিন্দা করা হলে সেগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সঠিক তথ্যের অবাধ প্রবাহ গঠনমূলক সমালোচনা যেমন একটি গণতন্ত্র, দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য। একইভাবে তথ্যের বিপরীতে অপতথ্য সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। যখন সমাজ ধ্বংস হবে তখন আমি আপনি কেউই কিন্তু রেহাই পাব না। তাই আমাদের সম্মিলিতভাবে একটি দায় আছে কীভাবে আমরা অপতথ্য রোধ করতে পারি। কীভাবে আমরা তথ্যের প্রবাহ আরও নিশ্চিত করতে পারি। কিন্তু এ তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কাটাছেঁড়া করতে চাই না।তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ঠিক রেখে কীভাবে আমরা তথ্যের প্রবাহ বাড়াতে পারি সেজন্য আমি প্রতিটি স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। তাদের বুদ্ধি পরামর্শ নিচ্ছি এবং আমারও নিজের কিছু চিন্তা রয়েছে। অন্যান্য দেশের দূতরা যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে কথা বলতে আসে তখন আমি তাদের কাছেও জানতে চাই যে কীভাবে তারা এ জিনিসটি করেছে।তিনি বলেন, গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের যারা স্টেক হোল্ডার আছে তারা সবাই আমাকে একটি কথা বলেছেন যে, বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় একটি শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। পেশার বাইরে গিয়ে অপসংবাদিকতা করে যারা সাংবাদিকতা পেশাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য আমি সাংবাদিকদের প্রতিটি স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে কথা বলে আলোচনা করে একটি পদ্ধতি গ্রহণ করতে চাই।তিনি বলেন, একটি অপশক্তি রয়েছে যারা এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের সংজ্ঞা বদলে দিতে চায়। সারা বাংলাদেশে একটি অন্ধকার ও জঙ্গিবাদ মৌলবাদের সমাজ তৈরি করতে চায়। এ অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের আসল যে উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন অর্থাৎ মুক্ত গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মুক্ত গণমাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে হয়তো আমরা কখনো কখনো হোঁচট খেয়েছি। কিন্তু তার মানে এ নয় যে আমাদের লড়াই বন্ধ হয়ে গেছে। এ অপশক্তিকে যদি পুরোপুরিভাবে পরাজিত করা না যায় তবে স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়নে কঠিন হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী যারা, গণতন্ত্রের বিরোধী যারা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী যারা তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালু রাখতে হবে। এ লড়াইয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন আপনাদের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা। রাজনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার প্রচারণা দেশ থেকেও করা হচ্ছে বিদেশ থেকেও করা হচ্ছে এ বিষয়ে সরকারের কি ভাবনা কি পদক্ষেপ রয়েছে? জানতে চাইলে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, অপতথ্য শুধু সমাজকে নয় সারা বিশ্বকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এর কারণ মিডিয়ার অনেক বিস্তৃতি বেড়ে গেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তৃতি আরও বেশি বেড়েছে এগুলোর কোনো রেগুলেশন না থাকার কারণে এ অপতথ্যের বিস্তার বাড়ছে। বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমের যতটা সমস্যা নেই কিছু কিছু ঘাটতি রয়েছে তারপরও তাদের জবাবদিহিতার জায়গা রয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো নীতিমালা বা জবাবদিহিতার বিষয় নেই। যার ফলে এখানে আরও বেশি অপতথ্যের বিস্তার হচ্ছে। এখানেও আমরা একটা নীতিমালা আওতায় আনার চেষ্টা করছি। তবে যে কাঠামো তৈরি করি না কেন সেটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে।গুজব অপদার্থ প্রচারসহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকাগুলো যেমন অনিবন্ধিত অনলাইনগুলোর বিষয়ে আপনারা কি পদক্ষেপ নিয়েছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর অনেক কাজ এগিয়েছে যখন কাজ প্রক্রিয়াধীন থাকে তখন কিছু দেখা যায় না তবে যখন ফলাফল এসে পড়ে তখন অনেক কিছুই দেখা যায়।তিনি বলেন, আমাদের ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর মধ্যে যেগুলো প্রতিষ্ঠিত সেগুলোর ২১৩টি অনলাইন পোর্টাল অনুমোদন রয়েছে। শুধুমাত্র অনলাইন মিডিয়া যেগুলো প্রতিষ্ঠিত তার মধ্যে ২১৩টির নিবন্ধন রয়েছে। এর বাইরে কতগুলো আবেদন করেছে, কতগুলো আবেদনের প্রেক্ষিতে নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, আর অনেকগুলোর আবেদন নেই এর সবগুলোর তালিকাই করতে বলা হয়েছে সে অনুযায়ী যেগুলোর নিবন্ধন থাকবে না সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর যারা নতুনভাবে আবেদন করবে তাদেরটা চালু থাকবে যাচাই-বাছাই করা হবে পরিশেষে তাদেরটা ঘাটতি থাকলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাই পেশাগত সাংবাদিকতা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে আমরা আপনাদের এ দাবিগুলো নিয়ে কাজ করছি।মিট দ্য রিপোর্টার্সে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। এছাড়া বর্তমান কমিটির সব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।