প্রণব কুমার সাহা, মাদারীপুর প্রতিনিধি : আগামী ২১শে অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ ধর্মীয় উৎসবে যে কোন সংঘাত এড়াতে প্রতিটি পূজা মন্ডপ থাকবে কঠোর নজরদারীতে। মাদারীপুর জেলায় শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে
গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খানের সভাপতিত্বে এবং গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জেলা পুলিশের আয়োজনে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম বিপিএম (বার) পিপিএম এর সভাপতিত্বে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর মাদারীপুর জেলায় ৪৬২টি পূজা মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ভাস্কর সাহা ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রানতোষ মণ্ডল বলেন, এ বছর জাঁকজমকপূর্নভাবে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। পূজা উদযাপনে জেলা প্রশাসনের দেয়া সিদ্ধান্ত মেনেই পূজা উদযাপন করা হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিমা অরক্ষিত রেখে কেউ যেন ঘরে ঘুমিয়ে না থাকে সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমরা সামাজিক সম্পৃতিতে বিশ্বাস করি, আমরা ধর্মীয় সম্পৃতিতে বিশ্বাস করি। এটা শুধু আমি চাইলেই হবে না, আপনাদের সকলকে বিশ্বাস করতে হবে। কেউ যেনো কোনো অবস্থাতেই উস্কানি মুলক কিছু করতে না পারে। আর যদি করেই ফেলে তাহলে তৎক্ষনাত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করুন। আজকাল যা কিছুই ঘটুক, পেসবুকে বিভিন্ন ভাবে সেটাকে উপস্থাপন করে একটি সমস্য সৃষ্টি করা হয়। আমরা সমাজে বসবাস করি, তাই দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। সমাজের সবাই এখনো ফেরেশতা হয়নি। সুতরাং আমরা যেনো তাদের ফাঁদে পা না দেই। একজন চাচ্ছে যে, আপনারা রেগে যান, কোনো একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক। সে চাচ্ছে বলে একটা ক্লু দিলো আর আমরা ঝাঁপায় পরলাম, সেটা যাতে না হয়। এ বছর পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলায় প্রতিটি পূজা মন্ডবে সিসি ক্যামেরা লাগানো বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সূর্যাস্তের আগেই প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে কার্যক্রম ঘুরে ঘুরে দেখবে। আজান, নামাজের সময় মাইক বন্ধ থাকবে। সাউন্ড স্পিকার ব্যবহার সীমিতকরণ নিশ্চিত করতে হবে। কোন রকম অপ্রীতিকর ও সামপ্রদায়িক উসকানিমূলক ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি/সেক্রেটারী ও জনপ্রতিনিধিরা সতর্ক থাকতে হবে।
ডিসি বলেন, এবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করা হবে। এ দেশে কোনো অপশক্তি যেনো মাথাচাড়া দিতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। দুর্গাপূজা ঘিরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না ।
ডিসি আরো বলেন, ‘কয়েক দিন পরই হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসব ঘিরে উন্নয়নবিরোধী একটি মহল দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। গত বছর দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় ফেসবুকে অপপ্রচার চালিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল, তা সফল হয়নি। এবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করা হবে। এ দেশে কোনো অপশক্তি যেনো মাথাচাড়া দিতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জেলা পুলিশের আয়োজনে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম বিপিএম (বার) পিপিএম তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের আইন শৃংখলা বাহিনীর সকল সংস্থা থেকেই ধারনা করা হচ্ছে এ বছর ঝামেলা হতে পারে। ভিতর থেকে হোক বা বাইরে থেকে হোক, আমরা করি বা আপনারা করেন যেভাবেই হোক হতে পারে। আমরা জানি আমাদের মাদারীপুরে এমন কিছু হবে না। কিন্তু সারা বাংলাদেশেই না হোক আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি। আমরা বিশেষ সতর্ক অবস্থানে থাকবো। আমরা আপনাদের পাশে সব সময় আছি। যে কোন প্রয়োজনে আপনারা যোগাযোগ করবেন। আর আমরা বিট পুলিশিংয়ে মিটিং করবো। এখানে সবাইকে রাখতে না পারলেও বিট পুলিশিংয়ের মিটিংয়ে সবাইকে রাখতে পারবো।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, শুধু দুর্গাপূজা নয়, কখনোই কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। আগামি দুর্গাপূজায় কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ থাকবে না। পূজামণ্ডপ ঘিরে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা বা উসকানি দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতিমূলক সভায় মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কামরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মনিরুজ্জামান ফকির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) ভাস্কর সাহা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আলাউল হাসান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) রব্বানী হোসেন, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এইচএম সালাহ উদ্দিন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রানতোষ মন্ডল, সাধারন সম্পাদক বাবুল দাস, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্যামল দে, সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিমল বাড়ৈ, সাংবাদিক প্রণব কুমার সাহা অপূর্বসহ জেলা ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নের্তৃবৃন্দ ছাড়াও আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।