কাজী আনিছুর রহমান(রাণীনগর,নওগাঁ): আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে নেমেছেন নওগাঁ-৬,(আত্রাই-রাণীনগর) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ইতি মধ্যেই তারা গ্রামে গ্রামে এবং হাটে-বাজারে গিয়ে সাধারণ জনগনের সাথে কুশল বিনিময় এবং মোটরসাইকেল শোডাউন করে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নানান ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনমত গড়ে তুলছেন। এছাড়া অন্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও মাঠ গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন। ফলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদচারনায় এখন থেকেই এলাকায় বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। তবে বিএনপি তাকিয়ে আছেন দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে।
জানা গেছে,১৯৯১সাল থেকে ২০০৬সাল পর্যন্ত নওগাঁ-৬,(আত্রাই-রাণীনগর) আসন ছিল বিএনপির দখলে। একটানা দীর্ঘ ১৫ বছর এই আসনে বিএনপি’র এমপি ছিলেন,তৎকালীন সময়ের চারদলীয় জোটের সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর।এর পর বিএনপি সরকারের শেষ মুর্হুতে ২০০৬সালের ডিসেম্বর মাসে আলমগীর কবীর দল ত্যাগ করেন এবং পরবর্তিতে এলডিপিতে যোগদান করেন। পরে ২০০৮সালে নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা মহাগর শ্রমীকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে এই আসনে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বুলুকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন।সেই থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে এই আসনটি।
এরই মধ্যে ২০১৮সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলমগীর কবীর আবারো বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। সে সময় আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে ইসরাফিল আলম আবারো এমপি নির্বাচিত হন।২০২০সালের ২৭জুলাই এমপি ইসরাফিল আলম মারা গেলে ওই আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে আনোয়ার হোসেন হেলালকে মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে বিএনপি থেকে শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু,ন্যাশনাল পিপলস্ পাটি থেকে ইন্তেখাব আলম রুবেল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে শাহজাহান আলী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল।তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন,সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আবারও আসনটি ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা দলটির। কিন্তু সরকার দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন,বিরাজমান শান্তি ও সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নকে ধরে রাখতে জনগন আবারো আওয়ামীলীগকেই নির্বাচিত করবেন।
এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় ৮মাস বাঁকী থাকলেও এখনই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জনমত সৃষ্টিতে মাঠে নেমেছেন সরকার দলের বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইতি মধ্যে মাঠ চুষে বেড়াচ্ছেন তারা।
সরকার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন,রাণীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন হেলাল,রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী,সাবেক এমপি মরহুম ইসরাফিল আলমের স্ত্রী নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সুলতানা পারভিন বিউটি,সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমানের ছেলে নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন,রাণীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব (অব:) ড. ইউনুস আলী প্রামানিক। অধ্যক্ষ জিএম মাসুদ জুয়েল। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকিয়ে আছেন দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে। দলীয় সিদ্ধান্ত ক্রমে যদি তারা নির্বাচনে অংশ নেয় এই ক্ষেত্রে এই আসনে বিএনপি থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু,সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু,কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ন আহবায়ক এছাহক আলীসহ আরো কয়েকজন মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া রাণীনগর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান,ন্যাশনাল পিপলস্ পাটির যুগ্ন মহাসচিব ইন্তেখাব আলম রুবেল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম থেকে মোস্তফা ইবনে আব্বাসের নাম শোনা যাচ্ছে।
সরকার দলীয় এমপি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন,জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের পরিবার আওয়ামীলীগের সাথে সম্পৃক্ত। শুধু দলকে আঁকরে ধরে রাখায় আমার ছোট ভাই রাণীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে। গত উপ-নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি।এমপি নির্বাচিত হবার পর থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়নকে বেগবান করেছি এবং এলাকার সন্ত্রাস,দখলবাজী,চাঁদাবাজী বন্ধ করে শান্তি ফিরে এনেছি। আসা করছি আগামী নির্বাচনে তৃনমূলের মতামতের ভিত্তিতে দল আবারও আমাকে মনোনয়ন দিবে।মনোনয়ন পেলে বিরাজমান শান্তি ও সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নকে ধরে রাখতে জনগন আবারো স্বতস্ফুর্তভাবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।
মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এবং পরবর্তিতে দেশকে পূর্ণ গঠনে নানানভাবে কাজ করেছি। এর আগে বেশ কয়েকবার মনোনয়ন চেয়েছিলাম। সেই থেকেই এলাকার মানুষের সাথে মিশে আছি এবং জনগনের কাছ থেকে ব্যপক সারা পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু দলের একজন ভাল কর্মী,সৎ মানুষকে মনোনয়ন দেবেন সেহেতু আসা করছি এবার মনোনয়ন পাবো।সুলতানা পারভিন বিউটি বলেন,আমার স্বামী প্রয়াত ইসরাফিল আলম এমপির সঙ্গে শুরু থেকেই তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলাম এবং এখনো আছি।আমার সাংগঠনিক তৎপরতার স্বীকৃতি স্বরুপ আমাকে নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত করেছেন এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষে মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটিতে সদস্য ছিলাম।আমার স্বামী ইসরাফিল আলমের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশন সফল করার জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি।মনোনয়ন পেলে এলাকার লোকজন সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে আসা করছি।এ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন বলেন,যোগ্যতা ও তৃনমূলের জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে মনোনয়ন দিলে শতভাগ আসাবাদী আমিই মনোনয়ন পাবো ইনশাল্লাহ। মনোনয়ন দিলে সংসদীয় এলাকার মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।
ড: ইউনুস আলী প্রামানিক বলেন,উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষিত,সৎ ও ভাল মানুষকে মনোনয়ন দিবেন। তিনি বলেন,ছাত্র জীবনে বাকৃবি শাহাজালাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলাম।চাকুরি জীবনে কৃষি মন্ত্রনালয়,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রাইভেটাইজেশন কমিশন,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের প্রথম এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।বর্তমানে রাণীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি এবং সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নিয়মিত গনসংযোগ করে যাচ্ছি। আসা করছি সবকিছু বিবেচনা করে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু হাসান বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। একসময় জাতীয় ছাত্রসমাজের সেক্রেটারী-সভাপতি এবং উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। রাজনৈতিক জীবন বিবেচনা করেই দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আসা করছি।
বিএনপির কেন্দ্রিয় নির্বাহি কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন,জনগনকে সাথে নিয়ে জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যা যা করার আমরা আগে সেটায় করবো এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সেদিকেই চলছে। ২০০৮ সালে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সে সময় ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনে হেরে দেয়া হয়েছে। কোন নির্বাচনে শতভাগ ভোট পরেনা। অথচ ওই নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ১০৩% ভোট পরেছে।ওই ফলাফল নিয়ে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনও করেছিলাম। এই আসনে বিএনপির জনপ্রিয়তা আগেও ছিল এখনো আছে। আগামী দ্বাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল যদি অংশ নেয় আর নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলে আবারো আমরাই বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।