আজ রোহিঙ্গাদের ষষ্ঠ গণহত্যা দিবস

আজ রোহিঙ্গাদের ষষ্ঠ গণহত্যা দিবস
মুহাম্মদ কিফায়তুল্লাহ(টেকনাফ প্রতিনিধি): পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের আরকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেদেশের সেনা কর্তৃক হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ৬ বছর পূর্ণ হওয়ায় ২৫ আগস্ট গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
এ উপলক্ষে টেকনাফের নায়াপাড়া শালবন ২৬নং ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা (২৫ আগস্ট) শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় ক্যাম্প ইনচার্জ অফিস সম্মুখ মাঠে প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে গণহত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান করেছে।

এই সভায় রোহিঙ্গা নর-নারী বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। সভায় বক্তব্য রাখেন ক্যাম্প ২৬নং এর নেতা বজলুল ইসলাম, মাস্টার মো. রশিদ, মো. জকরিয়া, মো. আয়াছ, আয়মিনারা বেগম, সাজেদা খাতুন প্রমুখ।

মজলুম, বিপদগ্রস্তা ও আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে এ সভায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ছয়টি বছর এদেশে লাখ লাখ মানুষ ত্রিপলের ছাউনির নীচে ঝুপড়ি ঘরে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। আমরা দ্রুত নিজ দেশে, নিজের ভিটে বাড়িতে অধিকার নিয়ে ফিরতে চাই। আমরা এই যাযাবর শরণার্থী জীবন চাই না। দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘকে উদ্যোগী হতে হবে।

বক্তারা ২৫ শে আগষ্টের বর্ণনায় বলেন, মিয়ানমারের আরকানে সে দেশের সেনা ও রাখাইনরা মিলে ১০০ নারীকে ধর্ষণ, ৩০০ গ্রাম নিশ্চিহ্ন, ৩৪ হাজার শিশুকে এতিম, ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আরকান রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ও ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। এসময় কথা হয় ২৬ ক্যাম্পে বসবাসকারী ফরিদ আহমেদের সাথে। তিনি নিজেদের চলাফেরার অধিকার, নিজ নিজ ভিটে মাটি ফেরত ফেলে দ্রুত ফিরে যাবেন বলে জানান।

নূর আহমদ নামে অপর এক বৃদ্ধ চীন ও বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাবাসনের যে উদ্যোগ সম্প্রতি গ্রহণ করেছে তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের ক্যাম্পে না নিয়ে নিজ নিজ ভিটে বাড়িতে ফেরত দিলে এখনই চলে যাব। এদিকে, টেকনাফ উপজেলার শালবাগান (নং-২৬) ও জাদিমুরা (নং-২৭) রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা প্রতিটি পয়েন্টে নিয়োজিত রয়েছে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে টহল জোরদার করা হয়েছে।

এ সময় তারা আজ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে তাদের ব্যানারে তিনটি দাবি তুলেছেন, মায়ানমারে আমাদের বাড়ি ফিরে যেতে চাই, আমাদের মাতৃভূমি আরাকান, আমরা প্রত্যাবাসিত হতে চাই।

উল্লেখ্য, আরসা নামক একটি সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যদের সেনা ছাউনিতে হামলার ঘটনার অজুহাতে গত ২০১৭ সনের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার বাহিনী। দেশটির সেনা, বিজিপি ও উগ্রবাদী রাখাইন যুবকরা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা নর-নারী, শিশুর ওপর বর্বরোচিত নৃশংসতা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে বানের পানির মতো বাংলাদেশের দিকে ছুটতে থাকে রোহিঙ্গারা। বর্তমানে নতুন-পুরনো মিলে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফের ৩০টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।

এসব শিবিরে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলেও এভাবে অনিশ্চিত ভাসমান অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে চান না।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::