আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) : মৌসুম শেষ না হতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রেকর্ড পরিমাণ আম রপ্তানি হয়েছে। আম রপ্তানিতে অন্য সব বছরের রেকর্ড ভেঙেছে এবার। ইউরোপের পাশাপাশি অন্য দেশের বড়-বড় সুপারশপেও বিক্রি হয়েছে এই জেলার সুমিষ্ট আম।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাগান থেকে আম বন্দরে যাওয়ার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্যাকেজিং হাউস নির্মাণের খুবই দরকার। এ ছাড়া উদ্ভিদ সংগনিরোধ কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট নিতেও ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের। এসব বাধা দূর করা গেলে রপ্তানি আয় আরও বাড়ানো সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২২৪ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। জেলার ৩১ জন বাগানী ইউরোপের বাজারের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও আম রপ্তানি করেছে। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ৫ জন, শিবগঞ্জ উপজেলার ১৭ জন, গোমস্তাপুর উপজেলার ২ জন, নাচোল উপজেলার ৫ জন এবং ভোলাহাট উপজেলার ২ জন।
এর আগের বছরগুলোতে জেলা থেকে ২০১৯ সালে ৬৫ টন, ২০২০ সালে ৬৬ টন, ২০২১ সালে ৬৫ দশমিক ৫৯৬ টন এবং বিগত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৩২ দশমিক ৫৬৯ টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে।
এ বছর ইতালি, ফ্রান্স ও লন্ডনে ৯০ টন আম রপ্তানি করেছেন শিবগঞ্জের আম চাষী ও ব্যবসায়ী ইসমাইল খান শামীম। এসব আমের মধ্যে ৭০ টন লন্ডনের সুপারশপে বিক্রি হয়েছে। শামিম খান বলেন, চলতি বছরে ক্ষীরসাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি আম বিদেশে রপ্তানি করেছি। বেশিরভাগ আমই ফ্রুটব্যাগ ছাড়া। চলতি মৌসুমে আরও ২০ থেকে ৩০ টন আম রপ্তানি করার ইচ্ছা আছে।
তিনি আরও বলেন, আম রপ্তানি করতে যেসব অবকাঠামো দরকার, সেগুলো নির্মাণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে প্যাকেজিং হাউস নির্মাণের খুবই প্রয়োজন। রপ্তানিতে জটিলতা দূরীকরণ ও সংশ্লিষ্টদের আশানুরূপ সহযোগিতা পেলে আরও বেশি পরিমাণে আম রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল ওহাব। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুবাইতে কাজ করতেন। দেশে ফিরে দুবাইয়ের বড় বড় সুপারশপগুলোতে আম রপ্তানি করার উদ্যোগ নেন। ইতোমধ্যে সাড়ে ১৭ টন আম রপ্তানি করেছেন। চলতি আমের মৌসুমে আরও ১০ টন আম রপ্তানির ইচ্ছা তার।
আব্দুল ওহাব জানান, রপ্তানিযোগ্য আম দুবাইয়ে পাঠানো হচ্ছে। চলতি বছরে ৩০ টন আম রপ্তানির টার্গেট রয়েছে। আগামী বছরে কাতারে রপ্তানির জন্য ইতোমধ্যে দুজন বায়ারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।
আমাদের জেলায় আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগার আর প্যাকেজিং হাউস নির্মিত হলে বিদেশের বাজারে রপ্তানি করা আরও সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি। বিগত দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম দেশ জুড়ে পরিচিত থাকলেও এবার রপ্তানিকারকরা বিদেশে পরিচিত করে তুলেছেন। ফলে বিদেশের বাজারগুলোতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত আমের চাহিদা বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, বিদেশে আম রপ্তানি করতে প্রয়োজন রপ্তানিকারকদের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করা। এ বছর রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। জেলার চাষিরা উত্তম কৃষিচর্চায় আম উৎপাদন করছেন এটা বোঝানো হয়েছে। বাগানে এসে আম খেয়েছেন, পরিবারের জন্য নিয়ে গেছেন। তাদের মনে হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম রপ্তানি করা যাবে।
আম রপ্তানিকারকদের দাবি নিয়ে তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় রপ্তানিকারকদের দাবি নিয়ে কাজ করছে। রাজশাহীতে প্যাকেজিং হাউস, হিমাগার নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। যাতে রপ্তানিকারকরা কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়ে। আগামী বছর ১ হাজার টন আম পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান পলাশ সরকার।