নিউজ ডেস্ক : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২৬ মাসে মোট অভিযুক্ত হয়েছেন দুই হাজার ২৪৪ জন। মোট অভিযুক্ত আটক হয়েছেন ৮৪২ জন এবং মোট মামলার সংখ্যা ৮৯০টি।শনিবার (২৩ এপ্রিল) গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ওয়েবিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ‘অন্তহীন দুঃস্বপ্ন- বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে সিজিএস। ওয়েবিনারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষণা কার্যক্রমের মুখ্য গবেষক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিংগুইসড প্রফেসর এবং সিজিএস’র উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. আলী রীয়াজ।ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)- এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর এবং আর্টিকেল নাইনটিন- এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল।গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে গবেষণাটির মুখ্য গবেষক ড. আলী রীয়াজ বলেন, এ প্রতিবেদনটি ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার অনুমোদিত প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম, অভিযুক্ত বা অভিযুক্তের পরিবার এবং তাদের নিকটজন, অভিযুক্তের আইনজীবী এবং থানা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা। তিনি বলেন, এই গবেষণা প্রকল্পটি ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি- এই সময়ের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মোট অভিযুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৪৪ জন, মোট আটক হয়েছেন ৮৪২ জন এবং মোট মামলার সংখ্যা ৮৯০টি। ২৬ মাসের গড় হচ্ছে প্রতিমাসে ৮৬ জনের বেশি অভিযুক্ত হন, গড়ে ৩২ জন আটক হন এবং গড়ে মামলা হয় ৩৪টির বেশি। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত অভিযুক্ত হয়েছেন ৯১৩ জন, আটক হয়েছেন ২৭৩ জন এবং মামলার সংখ্যা ৪২৬টি। মাসে গড়ে অভিযুক্ত হয়েছেন ৬০ দশমিক ৮৬ জন, আটক হয়েছেন ১৮ জন। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযুক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩৩১ জন, আটক হয়েছেন ৬০৯ জন এবং মামলার সংখ্যা ৪৬৪টি। মাসে গড়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন ১৪৭ জন করে, আটক হচ্ছেন ৬৭ জন করে এবং মামলা হয় ৫১টির বেশি। অভিযুক্তদের পেশা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরে ড. আলী রীয়াজ বলেন, মোট পেশা পাওয়া গিয়েছে ৮২০ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেশার মানুষ হচ্ছেন রাজনীতিবিদ (২৫৪ জন) এবং পরবর্তীতে আছেন সাংবাদিক (২০৭ জন)। অভিযুক্তদের বয়স বিবেচনায় উঠে আসে তরুণরাই এই মামলার দ্বারা সবচেয়ে বেশি হেনস্তার শিকার হন। ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়। আটকদের মধ্যে যাদের পেশা পাওয়া গিয়েছে সবচেয়ে বেশি আটক হয়েছেন রাজনীতিবিদরা (২৫.৪০ শতাংশ) এবং পরবর্তীতে আছেনসাংবাদিকরা (১৮.৭৩ শতাংশ)। আটকদের মধ্যে ছাত্রদের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বেশি বলে তিনি গবেষণায় উল্লেখ করেন।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- এর অধীনে সাংবাদিকদের অবস্থান তুলে ধরে ড. আলী রীয়াজ বলেন, এই আইনের আওতায় সবচেয়ে বেশি অভিযুক্ত এবং আটক হয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, শিক্ষকরা এই আইনে অভিযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আটক হন। এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও রয়েছেন ভুক্তভোগীর তালিকায়। এই আইনের অধীনে অভিযোগকারী কারা সেটি গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন রাজনীতিবিদরা (৪০.৫৫ শতাংশ )। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও মামলা করে থাকেন, যেমন- আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা। সরকারের সমর্থন আছে এই রকম মামলার পরিমাণ ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ।ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন সিজিএস’র চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।