হাওরে বন্যায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

হাওরে বন্যায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

সমাচার রিপোর্ট ; সুনামগঞ্জের হাওরে আকস্মিক বন্যার ফলে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে হাওরে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রকল্প নিতে পারছি, এখনকার মতো এতে প্রকল্প কখনই নেওয়া হয়নি। সুনামগঞ্জের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্প ৫০ কোটির উপর হলে সমীক্ষার প্রয়োজন আছে। সুনামগঞ্জের জন্য প্রকল্প নিয়েছি ৪৯৪ কোটি টাকার। নদী খননের ১৫৪৭ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। একনেকে পাস হলে নভেম্বরে কাজ শুরু করব। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। আগামী বছর থেকে এ সমস্যা হবে না। আগে এমন সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আমাদের তিনটি স্থানে ভাঙন হয়েছে। ফসলের ক্ষেত্রে ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হয়। ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবেন। তিনি বলেন, গত ১ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১২০৯ মিলিমিটার। প্রতি বছর আগাম বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকি, এবারও ছিলাম। অনেকে বলেছে কাজ দেরিতে হয়েছে। কাজ দেরির কারণ আমরা ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে ফেব্রুয়ারিতে শেষ করি। কিন্তু পানি জমে থাকায় সময়মতো কাজ শেষ করতে পারিনি। জানুয়ারিতে শুরু করেছিলাম, কাজটি শেষ পর্যায়ে ছিল। ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, হাওরে আমি নিজে গিয়েছি। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে আমি বলতে চাই এ ক্ষেত্রে কারো কোনো গাফিলতি থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডেও দুর্নীতি হয়, সেটি সহনীয় পর্যায়ে আনার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। বারবার বাঁধ ভাঙার মতো অভিযোগ আসে, কিন্তু জড়িতদের শাস্তি হয় না- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমন ৮ জন প্রকৌশলীকে কিন্তু আমরা সাসপেন্ড করেছি। এটা আইনের মাধ্যমে করতে হবে। এটা তো আর্মি না যে একজন লোককে রিটায়ার্ড করে দেওয়া যায়। বাইরে কিন্তু নিয়ম আছে। নিয়মের বাইরে কিন্তু কাউকে সাসপেন্ড করতে পারব না। দুদকের মামলা চলবে, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে সেই ৮ জনের বিরুদ্ধে। আমরা রাতারাতি একজন প্রকৌশলীকে বলতে পারি না তোমরা বাড়ি চলে যাও। আমরা নিয়মের মধ্যে চলছি। প্রকৌশলীদের কাজের মান যাতে ভালো হয়, দুর্নীতি যাতে কম হয়, সেজন্য পিএসি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণ এলাকায় যার জমি আছে সে সেখানকার সভাপতি। আরেও চারজন যাদের জমি আছে তারা মেম্বার। সেখানকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মেম্বার করা হয়। মসজিদের ইমামকেও মেম্বার করা হয়। এখন আমাদের প্রকৌশলীর হাতে কিছু নাই। কমিটিগুলোও ইউএনও করেন। প্রকৌশলীরা টেকনিক্যালি অ্যাডভাইস দেয়। এখানে দুর্নীতির প্রশ্ন আসে না। আমি বলব না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে, আমরা চেষ্টা করছি সেটি কমিয়ে আনার জন্য। সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য। বর্ষার সময় কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্ষার সময় যখন একটি জায়গা ভেঙে যায় সেখানে তাৎক্ষণিক কাজ না করলে পুরো গ্রামটা বিলীন হয়ে যাবে। সেজন্য আমরা কাজ করি। এটা মানে এই না যে আমরা বর্ষার সময় কাজ করতে যাই। বর্ষার সময় আমরা সেখানেই কাজ করতে যাই যেখানে ভেঙে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়াররা যায় না কেন? এই প্রশ্নটা এখন করতে পারবেন না। আমরা মানবতার জন্য কাজ করতে এসেছি। আমাদের কাজে গাফিলতি আছে কেউ বলতে পারবে না। তিনি বলেন, অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। ১৩ তারিখ থেকে যদি নতুন করে সমস্যা তৈরি হয় সেজন্য সতর্ক থাকছি। আমাদের প্রকৌশলীরাও কাজ করে যাচ্ছে। আমরা নদীমাতৃক দেশ। আমাদের পলিমাটিতে যখন পানি নামতে পারে না, বাঁধগুলো নরম হয়ে গেলেই সমস্যা তৈরি হয়। আমাদের প্রাকৃতিক সমস্যাটা আপনাদের বুঝতে হবে। এসব কারণে নদীভাঙন আমাদের বাপ-দাদারা দেখে আসছেন। একদিকে নদী ভাঙছে, আরেকদিকে নদী ভরছে। আমরাও দেখছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তারাও দেখবে। এটা কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। এর মধ্যেই আমাদের বসবাস করতে হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উদ্যোগ নেবো। কৃষিঋণ থাকলে যেন মওকুফ হয় সেটির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন তিনি হাওরে যাবেন, আমরা একসঙ্গে যাব। উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৫০ মিটার, আরেকটি ৫০ মিটার এবং ৩০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে একটি জায়গা আমরা বন্ধ করতে পেরেছিলাম। আরেকটি জায়গায় দেখলাম বন্ধ করেও লাভ নেই। কারণ পানির গভীরতা ৫০ থেকে ৬০ ফিটের মতো। ১ থেকে ৬ তারিখ মোট ১২০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আমি সেখানে যাওয়ার পর ১১টি উপজেলার ছুটি বাতিল করেছি। সেখানে কিন্তু সব স্তরের কর্মকর্তারা কাজ করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেটি নিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। আমরা স্থায়ী প্রকল্পগুলো করছি। ১৩ বছর আগেও আমাদের ভাঙন ছিল সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর সেটি এখন সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরে আসছে। তিন বছরে আমার সুনামগঞ্জে ২০৪টি সফর হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দায়িত্ব আমরা পালনের চেষ্টা করছি। যেখানে গাফিলতি আছে সেখানে তাদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় এবং আইনের আওতায় আনার জন্য যে প্রক্রিয়া সেটি মাথায় রেখে আমরা আগাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

মাদারীপুরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholders) অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা