নিউজ ডেস্ক : দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।বুধবার (১৩ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫০ বছরে পদার্পণ ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। কাজেই আজ এতটুকুই বলব যে, যতটুকু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি তা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই নিয়েছি। ফলে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই সম্মানটা ভবিষ্যতে যেন বজায় থাকে, এই ব্যবস্থাটা অব্যাহত রাখতে হবে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কত মানুষ মারা গেল! তত মানুষ মরে না, যত মানুষ মরার কথা ছিল—এই কথা যেন আর জীবনে কখনো শুনতে না হয়। এর জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, মানুষকে সচেতন করতে হবে।অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে করণীয় প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, বহুতল ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা যেন থাকে। যে কোনো বড় বিল্ডিং করবার সময় সেটাও যেমন নিশ্চিত করতে হবে, আবার সেখান থেকে মানুষকে উদ্ধার করা, সে জন্য যেসব সরঞ্জামাদি দরকার আমরা সেগুলোও ধীরে ধীরে সংগ্রহ করছি। যাতে করে এই দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস হয়।দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের মানুষকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা কথা বলবো, আমাদের দেশের মানুষকেই সর্তক থাকতে হবে। তাদের নিজেরও কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। যখনই আপনি ঘর-বাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাই করেন না কেন, সেটা করবার সময় আপনাকে আগে মাথায় রাখতে হবে—আগুন লাগতে পারে, ঝড় আসতে পারে, বন্যা আসতে পারে। যে কোনো ক্ষেত্রে আপনাকে ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, বিল্ডিং কোড মেনে সব করতে হবে। আর আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যা করার করে যাচ্ছি।ডেল্টা প্ল্যানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে বদ্বীপ, আমরা ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান করেছি। ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আমরা শুরু করেছি। এ ক্ষেত্রে নদী ভাঙন রোধ এবং পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা; কারণ বন্যা আসবে, আর বন্যা আমাদেরকে পলি দেয়, জমি উর্বর করে। কাজেই বন্যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা বা বন্যার সঙ্গ বসবাস করার অভ্যাস আমাদের করতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, বন্যার সঙ্গে বসবাস করবার মতো মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সম্পদ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে। প্রতিটি এলাকায় জলাধার থাকতে হবে, যেন বন্যার সময় পানির ধারণক্ষমতা বাড়ে বা বৃষ্টির পানি আমরা ধরে রাখতে পারি; যা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন, ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন, জীবন-জীবিকার জন্য প্রয়োজন—সেদিকে মাথায় রেখে আমাদের এই ব্যবস্থাটা নেওয়া দরকার।পানির প্রবাহ ও ধারণক্ষমতা বাড়াতে নদী খননের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ২০২২ সালের মধ্যে ৫১০ কিলোমিটার নদীর ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। গ্রীষ্মকালে সেচের পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার নির্মাণ, ৪ হাজার ৮৮৬ কিলোমিটার খাল খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, সংস্কারসহ নানাবিদ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করতে ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে জানান প্রধানমন্ত্রী। দুর্যোগ মোকাবিলায় বিগত সময়ে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।বিভিন্ন দুর্যোগে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের জনগণের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে। করোনার মতো যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকবে।অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন। গণভবন থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সিপিপির চারটি ইউনিট উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন ও কক্সবাজারের মুক্তিযোদ্ধা মাঠ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবীরা গণভবনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।