নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় পদ্মার পানি বিপৎসিমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে প্লাবিত হয়েছে এ দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল।পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৩৫ হাজার পরিবার। সরেজমিনে জানা গেছে, দোহার ও নবাবগঞ্জের চরাঞ্চল নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি, স্কুল, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পানিতে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।পানিবন্দি মানুষ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। করোনার কারণে উপার্জনই বন্ধ হয়ে অনেকেরই দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও জুটছে না। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র মুন্সিগঞ্জের ভাগ্যকুল মিটার গেজ স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত পদ্মার পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার (৬ দশমিক ৫৪ মিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।নবাবগঞ্জ: দোহার-নবাবগঞ্জ-মানিকগঞ্জ রক্ষা বাঁধের পশ্চিম অংশের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পদ্মা নদীর তীরবর্তী জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তিতপালিদয়া, পানিকাউর, কঠুরি, আশয়পুর, রায়পুর, ঘোষাইল, কেদারপুর, আর ঘোষাইল, রাজাপুর, বালেঙ্গা, কান্তারটেক, খাটবাজার, নয়াডাঙ্গী, চারাখালী ও পশ্চিম সোনাবাজু এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে অন্তত ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি, কুসুমহাটি, মাহমুদপুর, বিলাশপুর, সুতারপাড়া, নারিশা, মুকসুদপুর ইউনিয়নের পদ্মা তীরবর্তী অন্তত ৩০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ২০ হাজার পরিবার। জয়কৃষ্ণপুরের আশয়পুর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, পদ্মার পানি বাড়ছে। আমাগো পাটসহ সব ফসল এহন পানির নিচে। আমাগো কষ্ট দেকবো কে? রায়পুর গ্রামের দিপালী রাণী বাংলানিউজ বলেন, এক মাস অইলো পানি উটছে (ওঠছে)। কেও আইহে (এসে) দেখলোও না। প্রতি বছর বন্যায় আইলে ছবি তুলবার আহে (আসে)। আমাগো তো সাহায্য দেয় না। ’ হরিদাসী রাণী বলেন, ‘করোনায় কেউর কাম কাইজ নাই। মাচা পাইতে পোলাপান নিয়ে কত কষ্টে আছি। ঘরে খাওনো নাই। ’জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়াররম্যান মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, বেড়িবাঁধের বাইরে থাকায় প্রতি বছর পদ্মার পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়। এ বছরও ১২-১৩টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পদ্মার পাড়ে বেড়িবাঁধ থাকায় পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় পরিবারগুলোকে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ বলেন, বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা চাইলে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে পারেন। খাদ্যেরও ব্যবস্থা করা রয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু বলেন, বেড়িবাঁধের বাইরে ৮-৯ গ্রামের পানিবন্দি পরিবারগুলোর আশ্রয়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা চাইলে আশ্রয়নে গিয়ে থাকতে পারেন। এছাড়া খাদ্য সংকট যাতে দেখা না দেয়, তার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।