নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি কর্মকর্তাদের ভেতরে আগের মতো ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ এটা নেই বলে মন্তব্য করেছেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রোববার (১৮ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদনা চুক্তি (এপিএ) সই ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান এ মন্তব্য করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি যে জিনিসটা এখন লক্ষ্য করি, প্রত্যেকটা সরকারি অফিসারদের ভেতরে আগে যেমন সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল- এখন সেটা নেই। আজ প্রত্যেকে কিন্তু নিজে নিজের কাজটাকে নিজের বলে গ্রহণ করছে, আপনার দায়িত্বটা আপনি নিজে গ্রহণ করছেন এবং বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ।টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত আমি যেটা লক্ষ্য করেছি সবক্ষেত্রে আমাদের যারা প্রশাসনে আছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে আছেন অথবা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে আছেন সবার ভেতরে কিন্তু এই পরিবর্তনটা এসেছে।তিনি বলেন, সবাই কিন্তু আমাদের দেশের কাজগুলো যেগুলো জাতির জন্য, যেগুলো মঙ্গলের জন্য, জনগণের জন্য সেই কাজগুলোকে ওউন করেছেন। অর্থাৎ আপন বলে গ্রহণ বা দায়িত্ব বলে গ্রহণ করে আপনারা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন বলেই এত অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২০/২১ এর ভেতরে যে উন্নতিটা, এর ভেতরেই কিন্তু আমাদের অর্জনগুলো হয়েছে। আজ সারা বিশ্বে বাংলাদেশ একটা সম্মানজনক অবস্থায় এসেছে।জনগণের সেবা করা সরকারের দায়িত্ব সে কথা স্মরণ করিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কে? সরকার জনগণের সেবা করবে। আমাদের লক্ষ্য যারা সেবা করবে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং জনসেবা করা, অর্থাৎ জনগণের সেবামূলক প্রশাসন গড়ে তোলা। সরকারে থেকে শুধু সরকারের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবো তা নয়, এখানে আমাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে।সরকারপ্রধান বলেন, দায়িত্বটা হচ্ছে জনগণের প্রতি। জনগণের কল্যাণে, জনগণের স্বার্থে এবং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা। সেই কথাটা চিন্তা করে আমরা সব কর্মকাণ্ড, আমাদের যেমন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ, বাজেট বা প্রশাসনে যে সব কর্মকাণ্ড আমরা পরিচালনা করি, সেগুলো যেন গতিশীলতা পায়, সেগুলো যেন জনগণের কল্যাণমুখী হয়, জনগণ যেন তার সুফলটা ভোগ করতে পারে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি।‘আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়া বা শ্রমের মূল্য দেওয়া এটাতো আমাদের দায়িত্ব, তাদের সেভাবে সম্মান দেওয়া এবং সেভাবে কাজ করা, সেটাই তো বড় শিক্ষা এবং বড় দায়িত্ব। ’প্রধানমন্ত্রী হয়ে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আর্দশ নিয়েই আমার পথচলা এবং সেভাবেই আমাদের সংগঠন কাজ করেছে, আমরাও প্রচেষ্টা চালিয়েছি। যখন সরকারে এসেছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেবক হিসেবে কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার জন্য অন্য কিছু না। শুধু একটা সুযোগ। সুযোগটা হলো মানুষের জন্য কাজ করা, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই আদর্শটা বাস্তবায়ন করা। এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম, সেখানে একটা বিরাট ধাক্কা লেগেছে।সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এত বাধার মধ্যে, এরকম একটা অস্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন সেজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ এটুকু কাজ যদি আমরা না করতে পারতাম তাহলে হয়তো বাংলাদেশের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে দাঁড়াতো।তিনি বলেন, এটা ঠিক যেহেতু এটা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এখানে আমাদের একার কিছু করার নেই। তারপরও আমাদের প্রত্যেকের চেষ্টা রয়েছে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা, জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা গতিশীল রাখা।অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারায় আক্ষেপ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে আমি কিন্তু বলতে গেলে এক রকম বন্দি জীবনই…. তার আগে ছিলাম ছোট জেলখানায়। এখন আছি বড় জেলখানায়। কারণ এই গণভবেন থেকে আর বের হতে পারিনি। হ্যাঁ..একটু বড় জেলখানা এটা হলো কথা। একটু লিবার্টি আছে। দোতলা থেকে নিচে নামতে পারি, মাঠে হাঁটতে পারি এই পর্যন্ত।ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃতী কর্মকর্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।