লঞ্চে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, অতিরিক্ত ভাড়ার আভিযোগ 

লঞ্চে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, অতিরিক্ত ভাড়ার আভিযোগ 
নিজস্ব প্রতিবেদক :  আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার পর তৃতীয় দিনের মতো রাজধানী ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ।  ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ছিল চরম উপেক্ষিত।মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মানা দূরের কথা লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে প্রবেশ পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করতেও দেখা যায়নি এদিন। তারা শুধু যাত্রী নিতে ব্যস্ত। এছাড়া লঞ্চগুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্ত যাত্রী নিতে দেখা গেছে। তবে এ বিষয় মানতে রাজি না বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চ মালাকিরা। তারা বলেন, স্বাস্থ্য বিধি যথাযথ মেনেই লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে।  শনিবার (১৭ জুলাই) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ভোড়ে সদরঘাট প্লাটুনে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ভিড় কমে গেছে। ভোড়ে লঞ্চগুলোতে নিদিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। লঞ্চের ভেতরে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধির কোনো কিছুই৷ এবিষয়ে ঢাকা- চাঁদপুর – ঈদগাঁ ফেরিঘাট রুটের ইমাম হাসান-৫ লঞ্চের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ফয়েজ আহমেদ  জানান, আমরা সরকারের নির্দেশ মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে লঞ্চ ছাড়ব। যাত্রীদের মাস্ক পরার জন্য বার বার হ্যান্ড মাইকে প্রচার করা হচ্ছে৷ কিন্তু যাত্রীরা মানছে না। আমরা তাদের বলতে পারি। কিন্তু যাত্রীরা যদি নিজেদের ভালো নিজেরা না বোঝেন তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।  আপনার লঞ্চে প্রবেশ পথে কাউকে দেখলাম না হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করতে, এছাড়া যাত্রীরা ডেকে প্রায় গাঁ ঘেষে বসে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাত্রীদের দূরত্ব বজায় রাখতে বললে বলে আমরা এক পরিবারের। এছাড়া লঞ্চের প্রবেশ মুখে আমাদের একজন স্যানিটাইচার স্প্রে করছে একই সঙ্গে তাপমাত্রাও মাপছে যাত্রীদের।  তিনি বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশ মতো চেয়ারে এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী বসানো হলেও আমরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি না। সরকারের রেট অনুযায়ী ভাড়া ডেক ১৮৬ টাকা আমরা নিচ্ছি ১৫০ টাকা৷ আর চেয়ারের ভাড়া ২৮৮ টাকা আমরা নিচ্ছি ২০০ টাকা। আরো দু’দিন পর থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। আজ সন্ধ্যা থেকে হয়তো যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে। সোনার  তরী-২ লঞ্চের যাত্রী রফিকুল ইসলাম মাস্ক ছাড়াই লঞ্চে ঘুরে বেড়েচ্ছেন। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি ঈদ করতে। লঞ্চে একসঙ্গে যাওয়ার জন্য ডেকে বিছানা পেতেছি। ভাই কিসের করোনা, হলে তো এতো দিন মানে গত দেড় বছরে হতো। আমাদের করোনা হবে না। এছাড়া লঞ্চ কর্তৃপক্ষই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। কোথায় তারা তো লঞ্চের প্রবেশের সময় স্যানিটাইজারও দেয় নাই।  ভোলা রুটে চলাচলকারি গ্লোরি অব শ্রীনগর-৩ এর যাত্রী হাসান  বলেন, ঈদের ভিড় এড়াতে দুইদিন আগেই স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি কিন্তু লঞ্চে মানাটা আসলেই অনেক কঠিন কাজ। ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লঞ্চে চুপ করে বসে থাকা যায় না। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বার বার মাইকিং করছে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কিন্তু এতে কোনো লাভ হয় না।বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিজীবী সাইফুল ইসলাম সকাল থেকেই সদরঘাট টার্মিনালে এসে বসে আছেন হাতিয়ার যাওয়ার জন্য। তাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, কি করবো ভাই ডাবল ভাড়া দিয়ে কেবিন নিয়েছি। যদি সেটা হাত ছাড়া হয়ে যায় সেজন্য আগে এসে বসে আছি। হাতিয়ার লঞ্চগুলোতে ডিলাক্স কেবিনের ভাড়া এক হাজার ১০০ টাকা। সেখানে আমাকে দিতে হয়েছে আড়াই হাজার টাকা।বরগুণার যাত্রী মাহমুদ আলম বলেন, বরিশাল যাবো ভাই। তিন দিন ধরে কেবিনের  টিকিটের জন্য ঘুরছি কিন্তু পেলাম না। অবশেষে চেয়ারের টিকিট পেয়েছি এম ভি পূবালী-১ এর তাও প্রায় দ্বিগুন ভাড়া দিতে হয়েছে।  এ বিষয়ে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আমরা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে লঞ্চ ছাড়ছি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে সব লঞ্চ মালিকদের বলা হয়েছে।  কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না। আমরা এবার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছি। তবে, নৌযানে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানানো অনেক কষ্টকর বিষয়।  বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, যাত্রীরা সচেতন না হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা অনেক কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মাস্ক পরা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সে রকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নেব। লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী এড়াতে সময়ের আগেই লঞ্চ ছেড়ে দিচ্ছি। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সাধারণ সময়ে ১৫০টি লঞ্চ যাতায়াত করে। ঈদ মৌসুমে সেখানে শুধু সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যায় ১২৫টি। তবে এবার ঈদের আগের দিনের অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ৩০টি অতিরিক্ত বা বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে এগুলো ছাড়া হবে বলেও জানান তিনি।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ থেকে  জানান, শনিবার ভোড় ৬ টা থেকে বেলা ১২ পা পর্যন্ত ২৭ টি লঞ্চ দেশের বিভিন্ন রুটে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে গেছে। এসময়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসেছে ৫০ টি লঞ্চ। ঈদের জন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন লঞ্চ একটু বেশি যাওয়া আসা করছে। আগে যেখানে স্বাভাবিক সময়ে ৮৫ টি লঞ্চ ছেড়ে যেত এখন সেখানে ১০২ টি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে।  বিভাগ থেকে জানানো হয়, এবছর লঞ্চের যাত্রী অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কম৷ তবে গার্মেন্টস ছুটি হলে আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার একটা চাপ পড়বে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিধি মানাতে পর্যাপ্ত নৌ ট্রাফিক পুলিশ পল্টুনে মনিটরিং করছে৷ এদিকে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে কঠোর ‘বিধি-নিষেধ’ শিথিল করায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নৌযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে, যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।  এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৩ জুলাই সকাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার ও অন্যান্য) চলাচল বন্ধ থাকবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন না দিয়ে শাস্তির মুখে মালয়েশিয়ান কোম্পানি

বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশ দল