১০ মাসে কাজ হারিয়েছেন ৭ দশমিক ৯ শতাংশ শ্রমিক

১০ মাসে কাজ হারিয়েছেন ৭ দশমিক ৯ শতাংশ শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১০ মাসে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সাময়িকভাবে কাজ হারিয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, পেশা পরিবর্তন করেছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক। গতকাল বুধবার অনলাইনে আয়োজিত ‘কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক সানেমের জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, বেতন বা মজুরির বিনিময়ে যারা কাজ করেন এমন ৬২ শতাংশ কর্মী বা শ্রমিক জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তাদের বেতন ২০১৯ সালের তুলনায় কমেছে। ৭.৯ শতাংশ জানিয়েছেন এই সময়কালে তারা কাজ হারিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত (জরিপ চলাকালে) কাজ ফিরে পাননি, ১.৭ শতাংশ জানিয়েছেন তারা ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর মাসে সাময়িকভাবে কাজ হারিয়েছিলেন, ৫.৪ শতাংশ জানিয়েছেন তারা পেশা পরিবর্তন করেছেন। স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত এমন ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালের মধ্যে তাদের আয় কমে গিয়েছে, ২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন এই সময়কালে তাদের কাজ বা ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত ৫২.৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর মাসে তাদের ব্যবসা বা কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৭ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর মাসে তারা কাজ হারিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দিতে পারেননি, নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ১৬ শতাংশ। কৃষিখাতে বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৬৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে ২০১৯ সালের তুলনায় তাদের আয় কমে গিয়েছে, তৈরি পোশাক খাতের জন্য এই হার ৬৯ শতাংশ, তৈরি পোশাক ব্যতীত অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জন্য এই হার ৫৮ শতাংশ, নির্মান খাতের জন্য ৭৪ শতাংশ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় ৫৭ শতাংশ এবং পরিবহন খাতের ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন তাদের বেতন বা মজুরি এই সময়কালে কমে গিয়েছে। বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৩৮ শতাংশ কর্মজীবী জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরের সময়কালে তাদের বেতন কমেনি, ২৮ শতাংশ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তাদের বেতন বা মজুরি কমেছিল কিন্তু জরিপ চলাকালীন সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২১) তাদের বেতন বা মজুরি আগের অবস্থায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের অবস্থায় ফিরেছে এবং ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তাদের বেতন বা মজুরি কমেছিল কিন্তু জরিপ চলাকালীন সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২১) তাদের বেতন বা মজুরি আগের অবস্থায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের অবস্থায় ফেরেনি। কর্মসংস্থানে নিয়োজিত এমন ২০ শতাংশ কর্মজীবী জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বরের সময়কালে তাদের আয় কমেনি, ৪৩ শতাংশ জানিয়েছেন ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তাদের আয় কমেছিল কিন্তু জরিপ চলাকালীন সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২১) তাদের আয় আগের অবস্থায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের অবস্থায় ফিরেছে এবং ৩৭ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তাদের আয় কমেছিল কিন্তু জরিপ চলাকালীন সময়ে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২১) তাদের আয় আগের অবস্থায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের অবস্থায় ফেরেনি। শহর এলাকায় বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করতেন এমন ৮.৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালে তারা কাজ হারিয়েছেন এবং এখনো বেকার রয়েছেন, গ্রামের ক্ষেত্রে এই হার ৭.৩৯ শতাংশ; বরিশালে এই হার ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১০ শতাংশ, ঢাকায় ৮ শতাংশ, খুলনায় ৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫ শতাংশ, রংপুরে ১০ শতাংশ এবং সিলেটে ৭ শতাংশ। জরিপে দেখা গিয়েছে ৪৯ শতাংশ কর্মজীবী ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে চাকরি হারানো, বেতন না পাওয়া বা কম বেতন পাওয়া, বাসা ভাড়া ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে না পারা ইত্যাদি কারণে শহর থেকে গ্রামে চলে এসেছেন। তবে এই ৪৯ শতাংশ কর্মজীবীর প্রায় সবাই আবার শহরে ফিরে কাজে যোগ দিয়েছেন বা শহরে কাজ খুঁজতে এসেছেন। জরিপে দেখা গিয়েছে ২০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক ২০২০ সালের মার্চ-ডিসেম্বর সময়কালের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের পরিচালনায় ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পওতিয়ানেন। ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে কথা বলেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ওয়েবিনারে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৭০ জন ব্যক্তি অংশ নেন। জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের সময় ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর করোনা মহামারির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পেতে সানেম ২০২১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে খানা পর্যায়ে জরিপটি পরিচালনা করেছে। মোবাইল ফোন কলের মাধ্যমে পরিচালিত এই জরিপের খানাগুলিকে নির্বাচন করা হয়েছে ২০১৮ সালের সানেম-জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশন (জিইডি) এর পরিচালিত ১০৫০০ খানার মধ্যে থেকে। জরিপে ২৭৩ জন প্রবাসী শ্রমিক, ২৩০ জন দেশের মধ্যে অন্যত্র কাজের জন্য স্থানান্তরিত কর্মী বা শ্রমিক এবং দেশ বা দেশের বাইরে কাজের জন্য স্থানান্তরিত নন এমন ২৮৪৫ জন কর্মী বা শ্রমিকের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ঈদগাঁও–ঈদগড় সড়কে গুম ও ডাকাতি দমনে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি

শিবচরে মাদক রোধে ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি দিল উপজেলা বিএনপি