ঢাবির একমাত্র নারী গাড়িচালক ঝর্ণার গল্প

ঢাবির একমাত্র নারী গাড়িচালক ঝর্ণার গল্প
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: নাম ঝর্ণা কস্তা। অন্য দশটা মেয়ের মতোই এসএসসি, এইসএসসির গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন।শখের বশে নিয়েছিলেন গাড়ি চালনার ট্রেনিং। সময়ের পরিক্রমায় সেই ড্রাইভিংয়েই এখন তার ক্যারিয়ার।২০১৩ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) গাড়ির চালক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র এই নারী চালক।প্রাথমিক, মাধ্যমিকের সব স্তর অতিক্রম করে ১৯৯৮ সালে নাটোরের সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হন ঝর্ণা। অর্জন করেন বাণিজ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে। একই বিদ্যাপীঠ থেকে গ্রহণ করেন দুই বছরের ডিগ্রি কোর্স।আলাপের এক ফাঁকে জানালেন নিজের ফ্যামিলি সম্পর্কেও। একমাত্র বোন কাজ করেন সেভ দ্য চিলড্রেনে। আর ভাই কাজ করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সিসিটিভির মনিটরিংয়ে। স্বামী জেমস গোমেজও গাড়িচালক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনে আছেন দীর্ঘ দুই দশক ধরে।ড্রাইভিং শেখা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি যখন কেয়ারে ছিলাম তখন চিন্তা করলাম নরমালি বড় লাইনে যাওয়া কষ্ট হয়ে যায়। তখন আমাকে বলা হলো যদি ড্রাইভিং পারি তাহলে ট্রান্সপোর্ট সুপারভাইজরের পদটা আমাকে দেবে। আমি ও আমার ননদ কাকলী গোমেজ কেয়ারের কোর্সে অংশ নেই। ভালোভাবে শেষ করি। আমার ননদ এখনও কেয়ার বাংলাদেশের চালক। ওর স্বামীও চালক।কেয়ারে থাকাকালীন কাজের অভিজ্ঞাতা নিয়ে ঝর্ণা কস্তা বলেন, তখন ফিল্ডে নারীদের জন্য টাফ ছিল। কোর্স শেষে আমাকে স্যার রংপুর পাঠান। সেখানে আমি ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করি। কেয়ারে জয়েন করার পরে এসব কাজের চাপের মধ্যে আমার একমাত্র ছেলে জেবিআর সম্পদ গোমেজ জন্মায়। তখন স্যারেরা খুবই খুশি হন। আমি এত চ্যালেঞ্জের মধ্যে পরিবারও সামলে নিচ্ছি। সবাই ভাবতো মেয়েরা ড্রাইভিং করলে অনেক সমস্যা হয়। পরবর্তীসময়ে স্বামীর চাকরির সুবাদে ঢাকায় চলে আসি।ঢাকায় সংগ্রামের জীবনের কথা জানিয়ে ঝর্ণা বলেন, ছেলেকে সময় দেওয়ার কথা চিন্তা করে ড্রাইভিং পেশা ছেড়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করি। আমার স্বামীও অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনে চালক (মাস্টাররোল) হিসেবে আছেন। এর মধ্যে নাসরীন ম্যামের সঙ্গে ২০১৩ সালের এপ্রিলে পরিচয় হয়। অক্টোবরে আমি জয়েন করি।ঢাবিতে একমাত্র নারী চালক হিসেবে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে কাজ করার পরিবেশ ভালো। আগে তো ফিল্ডে কাজ করেছি। এখানে আসার পরে প্রোভিসি ম্যামের ফ্যামিলি মেম্বারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়। যার কারণে আমার ফ্যামিলিকেও সময় দিতে পারি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমার ছেলেকে আমি নিরাপদে রাখতে পারি। স্যাররাও আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। ম্যাম অসুস্থ হওয়ার পরে আমি এই পেশা ছাড়তে চেয়েছিলাম। নতুন প্রোভিসি স্যার ও অফিসের সবাই আমাকে হেল্প করেন। পরে চিন্তা করে দেখলাম আামার ছেলের ভবিষ্যতের জন্য ইউনিভার্সিটি এলাকার পরিবেশ খুবই ভালো।উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরেও কেন ড্রাইভিংয়ে এলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি যখন কেয়ারে জয়েন করি তখন বেতন কম ছিল একারণে ড্রাইভিংয়ে যোগ দেই। পরে ছেলে হওয়ার পর ঢাকায় চলে আসি। অ্যাকাউন্টসে কাজ করি। ব্রিটিশ হাইকমিশনেও ড্রাইভিংয়ে ছিলাম। আশা ছিল সেখানে পার্মানেন্ট হবো। কিন্তু সেটা হয়নি। মাঝে মধ্যে মনে হয় এই পেশায় আসাই ঠিক হয়েছে কিনা। তবে দু’জনের আয়ে মোটামুটি ভালোভাবে চলে যায়। ছেলের জন্য ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে চাই।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

২৮ এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও ক্লাস চলবে

শিবচরে প্রথম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী অদ্রিজা সাহা উপজেলা পর্যায়ে ১টি ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩টি পুরস্কার লাভ