দন্ডিতকে দিয়ে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসম্মান: কাদের

দন্ডিতকে দিয়ে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসম্মান: কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধন করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল মঙ্গলবার কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে দেয়া বক্তব্যে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি দুর্নীতি মামলার একজন দণ্ডিত আসামিকে দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করার শামিল। দলে অনেক সিনিয়র নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা থাকতে টেমস নদীর পাড় থেকে আসামিকে দিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন স্বাধীনতার প্রতি বিএনপির কমিটমেন্ট নিয়েই জনগণ এখন প্রশ্ন তুলছে। ভিডিও কনফারেন্সে ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম-বোয়ালমারী রুটে বিআরটিসির দোতলা বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন। সেখানে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, বিএনপি সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানমালা একজন পলাতক আসামি দিয়ে উদ্বোধন করায় দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বিএনপি উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়ে কোন চেতনা বাস্তবায়ন করতে চায়? বিএনপির মুখে স্বাধীনতার চেতনা ভূতের মুখে রাম রাম ধ্বনির মতোই বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তারা যখন নির্বাচনে জিতে তখন এক কথা বলে, আর পরাজিত হলে বলে আরেক কথা। জনগণ ভোট না দিলেও তাদেরকে জোর করে জিতিয়ে তবেই প্রমাণ করতে হবে দেশে গণতন্ত্র আছে? আওয়ামী লাগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সন্ত্রাস নির্ভরতায় বিএনপির আন্দোলনে মানুষ এখন আর সাড়া দেয় না বরং মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয় তাদের আন্দোলনের কথা শুনলে। বিএনপির ভোট কেন কমে গেছে, এর দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। তারা তাদের ব্যর্থতার দায় অন্যান্যের ওপর চাপাতে সবসময় সিদ্ধহস্ত। সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, দেশে গাড়ি চালনায় নারীদের আগ্রহ বাড়ছে। তাই নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া উচিত। মন্ত্রী বিআরটিসিকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টের নির্দেশ দিয়ে বলেন, চট্টগ্রামসহ পুরোদেশে বাস পরিচালনার জন্য নতুন রুট চিহ্নিত করে রুট সম্প্রসারণ করতে হবে। এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বিপ্লব চলছে; উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতে নিয়েছেন। সরকার মেট্রোরেল নির্মাণে প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম চারলেন বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে। এর মাধ্যমে চীনের সাংহাই নগরের মতো ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে গড়ে উঠছে বীরপ্রসবিনী চট্টগ্রাম। মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরেকটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক করার পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হবে কিছু দিনের মধ্যেই। সেতুমন্ত্রী মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণে আমরা প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছি। এরমধ্যে পটিয়া বাইপাস সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। শাহ আমানত সেতু সড়ক চার ও ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ সম্পন্ন। মহাসড়কের কেরানীহাট, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ায় ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত কালুরঘাটে সড়ক কাম রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আগামী জুন মাসের মধ্যে এ সেতুর ডিজাইনের কাজ শেষ হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহন একটি সেবাখাত। যাত্রী সাধারণকে পরবিবহন সেবার আওতায় আনার জন্য শেখ হাসিনা সরকার গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিআরটিসি বহরে বাস সংখ্যা বৃদ্ধি। বর্তমানে এক হাজার ৩০০ এর বেশি বিআরটিসির বাস চালু রয়েছে। চট্টগ্রাম বাস ডিপোতে অনেকগুলো গাড়ি পড়ে আছে। এগুলো মেরামত করার জন্য আমি বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করব। এটি যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে। যেগুলো মেরামতযোগ্য সেগুলো কেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পড়ে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে তো গাড়ি আর থাকবে না। বিআরটিসির কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা যারা বিআরটিসির কর্মকর্তা হিসেবে আছেন, আপনার বেবিকে আপনি যদি নিজেই গলা টিপে মারেন, তাহলে রক্ষা করবে কে? বিআরটিসিকে যত্ন করে লালন পালন করা কর্মকর্তা-কমচারীদের দায়িত্ব। চালু থাকা বাসগুলো ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিআরটিসির সুনামের ধারা তা ফিরিয়ে আনতে হবে। যাত্রী সাধারণ বিআরটিসিতে চলাচল করতে অনেকেই আগ্রহী। বাসগুলোর যত্ন নেয়া হলে মানুষ আরও আগ্রহী হবেন। প্রশিক্ষিত চালকের অভাব রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি জেলায় এর কার্যক্রম চলছে। চলতি সপ্তাহেই ৮টি বিভাগীয় অফিসে থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে। অচিরেই যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে ৬৪টি জেলা থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হবে। এতে মাসের পর মাস আর অপেক্ষা করতে হবে না। নিজ জেলা থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করা যাবে। তিনি আরও বলেন, বিআরটিসি গাড়ি পরিচালনার পাশাপাশি দক্ষ চালক তৈরিতেও কাজ করছে। দেশে অনেক বেকার জনশক্তি রয়েছে। বিদেশে গাড়িচালকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অদক্ষ চালকের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা তৈরিতে বিআরটিসির তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো শক্তিশালী ও আধুনিকায়নে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। গাড়ি চালনায় নারীদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নারীরা ঠাণ্ডা মাথায় গাড়ি চালায়, তাই তাদের ক্ষেত্রে দুঘর্টনার ঝুঁকি কম। সেইজন্য গাড়িতে নারী চালকের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। বিদেশে উন্নত দেশগুলোতে নারী গাড়ি রয়েছে, এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারতেও নারী চালকের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। স্কুল বাস সার্ভিসে নারীদের শতভাগ সম্পৃক্ত করতে যাতে পারি সেই ব্যবস্থা করা দরকার। বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ মাঠে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ। এতে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া