বাংলা ভাষা ও নবাব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী

বাংলা ভাষা ও নবাব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী

সাধন চন্দ্র মণ্ডল : আজ থেকে শত বছর পূর্বে, ১৯২১ সালে বাংলা ভাষাকে প্রদেশের সরকারি ভাষা করার জন্য লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন এই মহান ব্যক্তিটি। টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর নবাব বাহাদুর। জন্ম ২৯ ডিসেম্বর ১৮৬৩। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ে তাঁর ভুমিকা ও অবদানের বিষয়ে জানতে হলে আমাদের একটু পিছন ফিরে দেখতে হবে। নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১১ সালে রংপুর অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন, “বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃস্তনের ন্যায়, জন্মভুমির শান্তি নিকেতনের ন্যায় বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষা আমাদের নিকট প্রিয়, কিন্তু হতভাগ্য আমরা, প্রিয় মাতৃভাষার উন্নতি কল্পেআমরা উদাসীন। অধঃপতন আমাদের হবে না – তো কার হবে ?” তৎকালীন প্রতিকুল পরিবেশে একজন জমিদার হয়ে বাংলা ভাষাকে প্রদেশের সরকারি ভাষা করার প্রস্তাব, তাঁর মাতৃভাষা ও মাতৃভুমির প্রতি গভীর ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত।
এই মহৎ মানুষটি ভাষা, সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৮৯৫ থেকে ১৯০৪ পর্যন্তনওয়াব সাহেবের কর্মতৎপরতা ছিল প্রধানত সাহিত্যও সংস্কৃতি কেন্দ্রিক। তিনি ১৮৯৫ সালে মিহির ও সুধাকর পত্রিকা একত্রিত করে সাপ্তাহিক ‘মিহির-সুধাকর’ নামে প্রকাশ করেন যার মালিক ছিলেন তিনি নিজে। এরজন্য একটা প্রেস ক্রয় করে তাঁর কলকাতা বাসভবনের নিচে স্থাপন করেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিতরেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর অপরিসীম অবদান ছিল।কৃকজ্ঞতাস্বরুপ লেখকগণ তাঁদের বিভিন্ন প্রকাশনা নওয়াব আরী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করেন।
শিক্ষানুরাগী ও দূরদর্শী এ জমিদার বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ ঃ ঈদুল আযহা (১৮৯০), ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল(১৯০০), মৌলুদশরীফ (১৯০৩), প্রাইমারী এডুকেশনইন রুরলি এরিয়াস(১৯০৬)। এছাড়া সুদীর্ঘ ২৩ বছর পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক আইন পরিষদ, বঙ্গীয় প্রেসিডেন্সী আইন পরিষদ এবং ভারতের ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন নওয়াব আলী চৌধুরী। তিনি এদেশের অবহেলিত ও অসহায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ওঅভাব অভিযোগের কথা সরকারের নিকট তুলে ধরতেন।
নবাব বাহাদুরের বড় অবদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। পূর্ববঙ্গকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার মূল ভুমিকা ছিল তাঁর। শুধু তাই নয় বৃটিশদের কাছে তাঁর স্টেটের অর্ধেক বন্ধক রেখে সমস্ত অর্থ যোগাড় করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম শুরু করার জন্য। ভাষা আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এ প্রতিষ্ঠানটি সর্বদা অগ্রনী ভুমিকা পালন করে আসছে।
নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম মন্ত্রী। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অনন্য অবদান ও আন্তরিকতার জন্য সেসময়ে তাঁকে শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। ১৯২৯ সলের ১৭ এপ্রিল ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এদেশে ৩৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তিনি জমি ও অর্থ দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে সহায়তা প্রদান করেন।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই মহান মানুষটিকে স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়, পরম ভালবাসায় ও অফুরান কৃতজ্ঞতায়।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

মাদারীপুরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholders) অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা