স্পিরিট আর রঙের তৈরি দামি ব্র্যান্ডের ‘বিদেশি মদ’

স্পিরিট আর রঙের তৈরি দামি ব্র্যান্ডের ‘বিদেশি মদ’
খিলবাড়িরটেক এলাকার একটি বাসার দোতলায় ভেজাল মদের এ কারখানায় সহজেই তৈরি হচ্ছিলো বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের ভেজাল মদ। এ ভেজাল মদ তৈরির মূল উপকরণ স্পিরিট, যা আনা হতো পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা থেকে। পরিমাণ মতো স্পিরিটের সঙ্গে পানি, রং, চিনির সিরা আর কিছু কেমিক্যাল মিশিয়ে নিমিশেই প্রস্তুত করা হতো এ মদ।
এদিকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও হকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হতো বিভিন্ন বিদেশি মদের বোতল। রাশিয়ান, স্কটিশ, সুইডিশসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের বোতলে ভেজাল মদ পুরে ছিপির উপরে মোমবাতি দিয়ে প্লাস্টিকের লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হতো। স্বাভাবিকভাবে যা দেখে বুঝার উপায় নেই মদটি নকল কি না।

গ্রেফতারদের বরাত দিয়ে ডিবি পুলিশ জানায়, এক গ্যালন স্পিরিট দিয়ে ৫০ থেকে ৫৫ বোতল মদ তৈরি করা হতো। যে কোনো দামি ব্র্যান্ড বলে বাজারজাত করা প্রতিবোতল এ মদ তৈরিতে খরচ হতো মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকা। কারখানা থেকে চক্রটির নিয়োজিত ডিলারের কাছে বিক্রি হতো ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকায় আর ভোক্তাপর্যায়ে প্রতিবোতল এ মদ বিক্রি হতো ছয় থেকে সাত হাজার টাকায়।
ভাঙারি ব্যবসায়ী থেকে মদ তৈরির ক্যামিস্ট
গ্রেফতার জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি চাঁদপুরে। এক সময় তিনি ভাঙারি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। প্লাস্টিক ও কাঁচের বোতল সংগ্রহ করে মিডফোর্ডে বিক্রি করতেন। পড়ালেখা না জানা এ জাহাঙ্গীরই বনে যান মদ কারখানার প্রধান ক্যামিস্ট। যিনি গত প্রায় তিন মাস ধরে কারখানাটিতে ভেজাল মদ তৈরি করছিলেন। বিনিময়ে প্রতিদিন তিনি ৫০০ টাকা পেতেন।বারটেন্ডার থেকে মদ কারখানার মালিক
এ চক্রটির মূলহোতা ও ভেজাল মদ তৈরির কারখানার মালিক নাসির আহমেদ ওরফে রুহুল। তিনি একসময় বিভিন্ন বারে বারটেন্ডার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে মদ বিক্রি করে আসছিলেন। আগে একটি মদের বোতল থেকে দুই থেকে তিনটি বোতল তৈরি করে বিক্রি করতেন। বর্তমানে বাজারে মদের সংকট তৈরি হওয়ায় নিজেই গড়ে তুলেছেন মদ তৈরার কারখানা।যেভাবে কারখানার সন্ধান
গত কয়েকদিন মদপান করার পর অসুস্থ হয়ে ভাটারা থানা এলাকায় তিনজন, ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় একজন ও মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় দুইজনসহ মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি গুলশান বিভাগ।
তদন্তে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় মদ সেবনে মৃত্যুর ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুইজন ব্যক্তি মোটরসাইকেলযোগে এসে এক বোতল মদ ভিকটিমকে দিয়ে চলে যায়। যা সেবন করে পরবর্তিতে ভিকটিমের মৃত্যু হয়। একপর্যায়ে ওই দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ। গত ২৮ জানুয়ারি রেদুয়ান ও মনতোষ মোটরসাইকেল যোগে গত ২৮ জানুয়ারি এক বোতল মদ দিয়ে গিয়েছিল ওই ব্যক্তিকে।তাদের গতিবিধি অনুসরণ করে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে নয়টায় তেজগাঁওয়ের ইয়ানতুন চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে মনতোষ, রেদুয়ান ও সাগরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভাটারা থানার খিলবাড়িরটেক এলাকার ভেজাল মদ তৈরির ওই কারখানায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে কারখানার মালিক নাসির, ম্যানেজার আল আমিন ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়।ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান  বলেন, এ চক্রের মূলহোতা নাসির দীর্ঘদিন ধরেই চড়ামূল্যে বিদেশি মদের নামে ক্রেতাদের হাতে বিষ তুলে দিচ্ছেন। একজন ভাঙারি ব্যবসায়ীর হাতে প্রস্তুতকৃত এ ভেজাল মদ খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার মাধ্যমে সেবনকারী পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি দেখতেন ম্যানেজার আল আমিন।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ভেজাল মদের এ কারখানাটি থেকে গত এক সপ্তাহে ২৩১ বোতল মদ বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষাক্ত মদ যারা পান করবে তাদের অঙ্গহানী ঘটনার আশঙ্কা থাকে, কয়েকজন মারাও গেছেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া