ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে মদের আসর বসিয়েছিলেন ৫ শিক্ষার্থী!

ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে মদের আসর বসিয়েছিলেন ৫ শিক্ষার্থী!
রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্ট। এখানে ফাস্টফুডসহ সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তবে এখানে মদের আড্ডা বসানোর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করেই প্রায় সময় এই রেস্টুরেন্টে বসতো মদের আসর। একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বেরিয়ে আসে উত্তরার এ রেস্টুরেন্টের অবৈধ কর্মকাণ্ডের তথ্য।মোহাম্মদপুরে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণের পর’ হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটার আগে ভুক্তভোগী তরুণীসহ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, সহপাঠীরা গত ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছুটে যান রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত ওই রেস্টুরেন্টে। সেখানে গিয়ে তারা নিজ উদ্যোগে আয়োজন করেন মদের পার্টি। পার্টির পর সেখানে থাকা ৫ জনের মধ্যে তিনজনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই তরুণীকে তার বন্ধু নিয়ে আসেন মোহাম্মদপুরের এক বান্ধবীর বাসায়। সেখানে ওই রাতে তাকে ‘ধর্ষণ করেন’ মর্তুজা রায়হান চৌধুরী নামে তারই বন্ধু। এতে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ৩১ জানুয়ারি রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই তরুণীর বাবা মোহাম্মদপুর থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।মামলার পর তদন্তে নামে পুলিশ। এ ঘটনায় মর্তুজা রায়হান চৌধুরী ও বান্ধবী নুহাত আলম তাফসীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও তার সঙ্গে থেকে মদপান করা আরও এক সহপাঠী আরাফাত রাজধানীর সিটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।এরপর বেরিয়ে আসে উত্তরার সেই রেস্টুরেন্টে বসে মদ পানের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ বিষয়ে ওই রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।পুলিশ বলছে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে ৫ শিক্ষার্থী অবৈধভাবে মদপান করেছে। কিন্তু এই বিষয়টি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থানায় জানাতে পারতো। কিন্তু তারা সেটি করেনি। এছাড়াও এই রেস্টুরেন্টে মদ্যপান ও মদ বিক্রির কোনো অনুমতি বা লাইসেন্স ছিল না।এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বলেন, উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে সাধারণ খাবার বিক্রি করে। তবে সেখানে তাদের মদ্যপান বা মদ বিক্রি করার কোনো অনুমতি ছিল না।তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরে ধর্ষণের শিকার ও নিহত ভুক্তভোগীসহ তারা পাঁচ জন ওই রেস্টুরেন্টে অবৈধভাবে মদ খাচ্ছিল। কিন্তু এবিষয়ে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু জানায়নি। যেহেতু এই রেস্টুরেন্টে মদ্যপানের অনুমতি নেই সেহেতু বিষয়টি পুলিশকে জানানো উচিত ছিল। রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি ইতোমধ্যে ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে গিয়ে তদন্ত করে এসেছি।এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, খাবার রেস্টুরেন্টে মদ বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে তাকে রেস্টুরেন্ট বার বলে। তবে উত্তরার ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টের কোনো অনুমতি বা লাইসেন্স ছিল না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ওই রেস্টুরেন্টটিকে এমন কোনো লাইসেন্স বা অনুমতি দেয়নি।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ অঞ্চল উত্তরের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, উত্তরার ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্ট সাধারণ খাবার বিক্রি করে। তাদের কোনো বার নেই। মদ বিক্রি ও সেখানে মদ্যপানের জন্য তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকো কোনো অনুমতি বা লাইসেন্স নেয়নি।এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে ভুক্তভোগী তরুণীসহ পাঁচ জন বন্ধু/সহপাঠী মদপান করে। তাদের মধ্যে ভুক্তভোগী তরুণী ও তার বন্ধু নেহা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বমি করে দেয়। সেখানে তারাই সেগুলো পরিষ্কার করে। এ সময়ের মধ্যে রেস্টুরেন্টে কর্তৃপক্ষের বিষয়টি জেনে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও তারা এ বিষয়ে পুলিশকে কিছু জানায়নি। এই ঘটনায় তারা জড়িত থাকতে পারে। আমরা উত্তরা পশ্চিম থানার সঙ্গে মিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উত্তরায় ব্যাম্বো শুট রেস্টুরেন্টে পার্টির জন্য তারা বাইরে থেকে সঙ্গে করে মদ নিয়ে যায়। রেস্টুরেন্টের কেউ না কেউ তো তাদের এমন কাণ্ড দেখার কথা। কিন্তু তারা বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি।এই ঘটনার পর পুলিশের ধারণা, রেস্টুরেন্টে এর আগেও এমন মদের আসর বসে থাকতে পারে। যদিও তাদের অনুমতি নেই।তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা শুনেছি মামলার আসামি নেহার বন্ধু বিমানবন্দর থেকে মদ এনে উত্তরার ওই রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেছে। সেখানেই তারা খেয়েছে। আমরা সেই ছেলের নাম-পরিচয় এখনো পাইনি। তাকে আমরা খুঁজছি। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।এর আগে, রবিবার ভোরে রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ‘ধর্ষণের শিকার’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত তরুণীর বাবা মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া