আপিলে আটকে আছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি

আপিলে আটকে আছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করলে তা খারিজ হয়ে যায়। একইসঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ বছর করেন আদালত। পরে ওই বছরের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তারপর থেকে আজ অবধি এ মামলার শুনানি শুরু হয়নি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, খালাস চেয়ে করা খালেদা জিয়ার আবেদন আদালতে উপস্থাপনের ওপর নির্ভর করছে এ মামলার শুনানি কখন শুরু হবে। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। কখন আপিল আবেদন আদালতে উপস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে সেটা দলের (বিএনপি) মহাসচিব ভালো বলতে পারবেন।’ তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ‘আমরা হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে খালাসের আবেদন করে রেখেছি। যথাসময়ে এবং যথানিয়মে এই মামলায় আপিলের শুনানি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল মামলা ফাইল করা থাকলে এটা সিরিয়াল বাই সিরিয়াল শুনানির জন্য আসে।’ ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলাটি দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৯ সালে এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর মাঝে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদলতের নির্দেশে স্থগিত ছিল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ হলো- এতিমদের জন্য সহায়তা হিসেবে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কুয়েতের আমির ওই টাকা দিয়েছিল। সৌদি আরবের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যম ওই টাকা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান অভিযুক্ত হন। চূড়ান্ত অভিযোগে ছয়জনের মধ্যে আরও আছেন- মমিনুর রহমান, সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক, শরফুদ্দীন আহমেদ এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী। মামলায় ২৩৬ কার্যদিবসে ৩২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়, ২৮ কার্যদিবসে আত্মপক্ষ সমর্থন এবং ১৪ কার্যদিবস যুক্তি-তর্ক শুনানি হয়। পরে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অর্থদণ্ডের টাকা প্রত্যেককে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়ার জন্য বলা হয়। কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ পৃথক আপিল করেন। ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত হয়ে এখন নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। আর কারাগারে রয়েছেন কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ। ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই তিন আসামির আপিল শুনানির জন্য আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার আসামি খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রিভিশন আবেদন করে দুদক। দুদকের আবেদনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা কেন বাড়ানো করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসসহ উভয়পক্ষ মোট ৩২ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। হাইকোর্টের আপিলের রায়ে বলা হয়, মামলায় তিন আসামির করা আপিল আবেদন (খালাস চেয়ে) খারিজ করা হলো। একইসঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে তাকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা। তবে মামলাটি যথাসময়ে আপিল বিভাগে শুনানি হবে বলে জানান খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও। খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হলেও সে বিষয়ে এখনো শুনানি শুরু হয়নি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রেখে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ খালেদা জিয়াকে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত হয়ে এখন তিনি নিজ বাসায় অবস্থান করছেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজাদ কাশ্মীরে বিক্ষোভ, নিহত ৪

বিএনপি ইসরায়েল-নেতানিয়াহুর দোসর: পররাষ্ট্রমন্ত্রী