দেখার কেউ নেই’, সুইসাইড নোটে আক্ষেপ করে দম্পতির আত্মহত্য

দেখার কেউ নেই’, সুইসাইড নোটে আক্ষেপ করে দম্পতির আত্মহত্য
অনলাইন ডেস্ক

আগের রাতেই মেয়ের জন্মদিন পালন করেছেন। কিন্তু মনে আনন্দ ছিল না কোনো। তারই প্রমাণ মিলল পরের দিন সকালে। ঘুম থেকে উঠে বৃদ্ধা মা-বাবার ঘরে ঢুকতে গিয়েই চমকে উঠেছিলেন মেয়ে। মা ও বাবা বিছানার উপর শুয়ে।

তাদের শরীর স্পর্শ করেই আতকে ওঠেন তিনি। মৃত্যু হয়েছে মা ও বাবার। পাশে পড়ে একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের ঘুমের ওষুধের খালি স্ট্রিপ। পাশে একটি কাগজে লেখা সুইসাইড নোট। তার মাথায় লেখা ‘ইচ্ছামৃত্যু’।

‘দেখার কেউ নেই’, এই আক্ষেপে নিজেদের ফ্ল্যাটেই আত্মহত্যা করেছে এই বৃদ্ধ দম্পতি। রবিবার ভারতের দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানা এলাকার জেমস লং সরনিতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে।মৃত্যু হয়েছে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ প্রদ্যুৎ লাহিড়ি ও তার স্ত্রী প্রণতি লাহিড়ির। দুজনের দেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সংখ্যক ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের।

জানা গেছে, হরিদেবপুরের এই দম্পতির অর্থের অভাব ছিল না। শুধু অভাব ছিল দেখাশোনা ও শুশ্রূষার। সুইসাইড নোটেই তা স্পষ্ট। তাতে বাংলায় লেখা, তাদের একমাত্র মেয়ে থাকেন ৯০ কিলোমিটার দূরে। দেখাশোনার অসুবিধা রয়েছে। তার স্থাবর ও অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তি মেয়েই পাবেন। মেয়ের প্রতি তাদের কোনো অভিযোগ নেই। একটি খাতা ও একটি ডায়েরির ছেঁড়া পাতায় এই সুইসাইড নোট লেখা। নিচে বৃদ্ধ দম্পতির সই।

পুলিশ জানিয়েছে, জেমস লং সরণির একটি চারতলা আবাসনের দোতলার তিন কামরার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছিলেন লাহিড়ি দম্পতি। মেয়ে মধুমিতা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের স্কুল শিক্ষিকা। কর্মসূত্রে অনেক সময়ই জয়নগরে থাকতেন। আবার কখনো মা-বাবার কাছে।

শনিবার তার জন্মদিন ছিল। জেমস লং সরণির বাড়িতেই ছিলেন তিনি। জন্মদিন পালনের পর রাতের খাবার খেয়ে প্রত্যেকে ঘুমাতে যান। মেয়ে মধুমিতা নিজের ঘরে ছিলেন। তিনি বুঝতেও পারেননি কখন তার মা-বাবা একসঙ্গে সুইসাইড নোট লেখার পর ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন।

সকালে উঠে মা-বাবাকে ডাকতে গিয়ে মেয়ে দেখেন, দরজা খোলা রয়েছে। মা-বাবার নিথর দেহ দেখে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। আসেন লালবাজারের গোয়েন্দারাও। পরে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থলে তদন্তে যান।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তারা যে আত্মহত্যা করেছেন, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জেনেছে, বৃদ্ধ দম্পতি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তাদের মেয়ের সংসারেও অশান্তি চলছিল। তার উপর মেয়ে বহুদূরে চাকরি করতে যান। করোনা পরিস্থিতিতেও মাঝেমধ্যে যেতে হত স্কুলে। তাই মা-বাবাকে সেভাবে দেখাশোনা করতে পারতেন না মেয়ে মধুমিতাও। অন্য কেউ বিশেষ দেখার ছিল না।

এছাড়া মেয়ের ডিভোর্স ঘিরেও চিন্তিত, বিমর্ষ ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। শুশ্রূষা পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপও ছিল তাদের। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে। আত্মঘাতী দম্পতির মেয়ে মধুমিতা ও অন্য আত্মীয়দেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে ভোট জালিয়াতির পরিকল্পনাকারী আবদুল হক পুলিশ হেফাজতে

হামাসের দাবি মানবে না ইসরায়েল: নেতানিয়াহু