ঢাকা: বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিঘ্নিত মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর মধ্যেই সময়ের নিয়মে আরো একটি বছরকে বিদায়ের পাশাপাশি চলছে নতুন বছর বরণের প্রস্তুতি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার সীমিত পরিসরে হলেও রাজধানীতে উদযাপিত হবে নানা অনুষ্ঠান। আর এই থার্টিফার্স্ট উদযাপন ঘিরে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ছাড়াও অন্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা থার্টি ফার্স্টের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন। ডিএমপি জানায়, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন ঘিরে নগরজুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলকা ঘিরে রয়েছে বাড়তি নজরদারি। পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা, কূটনৈতিক এলাকা গুলশান, বানানী ও বারিধারা এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এসব এলাকায় বহিরাগত প্রবেশে রয়েছে কড়াকড়ি, নির্ধারিত সময়ের পর স্থানীয়দের প্রবেশের ক্ষেত্রে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, থার্টি ফার্স্টে সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায়, ভবনের ছাদে এবং প্রকাশ্যে কোনো ধরনের জমায়েত বা অনুষ্ঠান করা যাবে না। সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় এলাকায় এবং রাত ৮টার পর গুলশান-বনানী এলাকায় বহিরাগ কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সূত্র জানায়, রাজধানীজুড়ে থার্টি ফার্স্টের নিরাপত্তায় প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও এলাকায় নজরদারিতে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরের পর থেকেই অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় প্রবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা তল্লাশি চৌকিতে বাড়তি তৎপর রয়েছেন। সন্দেহভাজনদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা প্রশ্নের। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, সন্দেহভাজনদের ব্যাগও করা হচ্ছে তল্লাশি। ডিএমপির গুলশান বিভাগ জানায়, রাত ৮টা থেকে গুলশান-বারিধারা-বনানী এলাকায় প্রবেশের জন্য আমতলী ও বনানী ২৭ নম্বর সড়ক খোলা রেখে বাকি সব সড়ক বন্ধ রাখা হবে। সবকিছু কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে। রাতভর সাদা পোশাকে পুলিশের পাশাপাশি স্ট্যান্ডবাই থাকবে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম। উঁচু ভবনগুলো থেকে নজরদারিসহ মোবাইল পেট্রোলিং, হোটেলকেন্দ্রিক বিশেষ ডিপ্লয়মেন্ট থাকবে। এছাড়া কূটনৈতিক পাড়ায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাত সন্ধ্যা ৬টার পরে বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় দেওয়া সাপেক্ষে শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। এবং নীলক্ষেত ক্রসিং দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করতে পারবে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে দুর্ঘটনা এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কেউ যাতে মদ্যপান করে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেসব বিষয়েও থাকবে কঠোর নজরদারি। থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান সীমিত আকারে উদযাপন করা হচ্ছে। ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে ৩১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে নির্ধারিত অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। ৩১ ডিসেম্বর রাতে পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া গাড়ি, মোটরসাইকেল চালনাসহ যে কোনো ধরনের অশোভন আচরণ এবং বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানান তিনি।