মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি পণ্যের জরিমানার তথ্য দিচ্ছে না কাস্টমস

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি পণ্যের জরিমানার তথ্য দিচ্ছে না কাস্টমস

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে দেশের ছয় কাস্টমস হাউজের কাছে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির অভিযোগে যেসব পণ্য চালানে জরিমানা করা হয়েছে তার তথ্য চেয়েছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জাতীয় বাজেট প্রণয়নের পর দুবার এই তথ্য চাওয়া হলেও অধিকাংশ কাস্টমস হাউজ থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি। এনবিআর থেকে ৩২ ধারায় করা জরিমানার তথ্য চাইলেও অধিকাংশ কাস্টমস হাউজ এই তথ্য এনবিআরে পাঠাতে গড়িমসি করছে। সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর ওই সংক্রান্ত চিঠি এনবিআর কাস্টমস হাউজগুলোর কাছে পাঠায়। তবে এখন পর্যন্ত একটি কাস্টমস হাউজ ছাড়া বাকিগুলো ওই তথ্য দেয়নি। তথ্য দিয়েছে একমাত্র বেনাপোল কাস্টমস হাউজ। বাকি ৫টি কাস্টমস হাউজ এনবিআরের ওই চিঠি আমলে নেয়নি। তারা মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য চালানের তথ্য দিতে গড়িমসি করায় রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে এনবিআরের উদ্যোগ কার্যত কাজে আসছে না। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় কাস্টমস এ্যাক্টেরও কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা হয়। অর্থ আইনের (৯নং আইন) অনুচ্ছেদ ১১ তে বলা হয়েছে- দি কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ৩২ ধারায় অপরাধ সংঘটিত হলে সর্বনিম্ন ২শ’ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ কোন আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করলে সর্বনিম্ন ২শ’ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৪শ’ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু কিছু কাস্টমস হাউজ ওই আইনের বাস্তবায়ন করলেও অধিকাংশ হাউজেই গড়িমসি বিদ্যমান। তাতে বড় অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সূত্র জানায়, কিছু কিছু কাস্টমস হাউজে আইনের বাস্তবায়ন হলেও অধিকাংশ হাউজে চলছে গড়িমসি। অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে অনেকের ওই আইনের প্রয়োগে তাগিদ নেই। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে তথ্য প্রদানের জন্য একাধিকবার পত্র দেয়া হলেও দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টমস হাউজ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ এবং ঢাকা কাস্টমস হাউজ ওই সংক্রান্ত কোন তথ্য এনবিআরকে দিচ্ছে না। বরং নানা বাহানায় সময়ক্ষেপণ চলছে।
সূত্র আরো জানায়, জরিমানার তথ্য খুবই স্পর্শকাতর। কারণ জরিমানার ক্ষেত্রে কাউকে সুবিধা দিলে এনবিআর এ্যাকশনে যাবে। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণে যদি সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয় সেক্ষেত্রে এনবিআরের কাছে তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। তাই কিছু কাস্টমস হাউজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। আর কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে জরিমানা বাবদও সরকারের শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি সংঘটিত হচ্ছে। যেখানে ২শ’ ভাগ জরিমানা করার বিধান, সেখানে হয়ত ৫০ শতাংশ বা কোন কোন ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানা করা হয়েছে। আর ওসব কারণে বিষয়টি নিজেদের কাছে রাখতে চাচ্ছে মাঠপর্যায়ে কাস্টমসের শীর্ষ কিছু কর্মকর্তা।
এদিকে এনবিআর সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন পর্যন্ত একটি কাস্টমস হাউজের তথ্য ছাড়া আর কোন হাউজের তথ্য এনবিআরে আসেনি। ৩২ ধারায় এর আগেও একবার চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোন কাজে আসেনি। এবারও তেমন হতে পারে। কারণ ওসব তথ্য এনবিআর যাচাই-বাছাই করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। যার কারণে তারা ওসব তথ্য দিতে চাচ্ছে না।
অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের শুল্ক নীতির সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া সত্যতা স্বীকার করে জানান, তথ্য চাওয়া এনবিআরের অভ্যন্তরীণ বিষয়, পত্রিকার বিষয় না।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন