নিজস্ব প্রতিবেদক : আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং যাত্রীসেবা আরো উন্নত ও গতিশীল করতে বিমান খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগে নানামুখী প্রকল্প চলমান রয়েছে। ফলে দেশের প্রধান বিমানবন্দর ঢাকার শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ সব বিমানবন্দরেই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ক্রমবর্ধমান বিমানযাত্রীদের চাহিদা মেটাতে কভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও পুরোদমে চলছে ওই কাজ। সেটি বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের চেয়ে প্রায় আড়াইগুণ বেশি অর্থাৎ বছরে প্রায় ১২ মিলিয়নের বেশি অতিরিক্ত যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে। হযরত শাহজালালসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে একদিকে যেমন দেশের সার্বিক বিমান চলাচল ব্যবস্থায় অগ্রগতি আসবে, অন্যদিকে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিরাপদ উড়োজাহাজ চলাচলের স্বার্থে শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরভিআর পরিমাপক যন্ত্র এবং এডব্লিউএস সরবরাহ স্থাপন করা হচ্ছে। তাছাড়া সারাদেশের এয়ারস্পেসের ওপর সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে এবং বিমান পরিচালনায় আরো সুরক্ষিত ও নিরাপদ সেবা দিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি যুগোপযোগী সিএনএস ও এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংস্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দরে উন্নয়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ওসব পদক্ষেপ নেয়ার ফলে অদূরভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রুটের সংখ্যা বাড়বে এবং নতুন নতুন গন্তব্য বাংলাদেশের আকাশপথে যুক্ত হবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যেমন জিডিপি বাড়াতে ও দেশকে মধ্যম আয়ের পর্যায়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে।
সূত্র আরো জানায়, বেবিচক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়েও নানা কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ আইকাওয়ের ফ্লাইট সেফটি সমীক্ষায় বিশাল অর্জন করেছে দেশের এভিয়েশন খাত, যা এশিয়ার মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া আন্তর্জাতিক এভিয়েশন সেফটি অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির টেকনিক্যাল রিভিউয়েও বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ ঘোষণার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বেবিচক প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মালেক জানান, দেশের আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর যাত্রী, কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতার মান ও পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতেই কাজ করছে সিভিল এভিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিএএবি)। বেবিচক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ওই লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রও কেনা হচ্ছে। তার মধ্যে বিশ্বমানের এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেমও (ইডিএস) নিশ্চিত করা হচ্ছে। কার্গোতে ইডিএস ও আর এ থ্রি এরিয়া সংযোজনের মাধ্যমে আরো নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত করা হচ্ছে কার্গো স্ক্যানিং।
অন্যদিকে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, বেবিচকের আওতায় বর্তমানে দেশের সব বিমানবন্দরেই নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প অব্যাহত রয়েছে। শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পাশাপাশি চলমান রয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে বাড়ানোর ও টার্মিনাল ভবন সম্পূর্ণ আধুনিক রূপান্তরের কাজ। বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপদে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর ও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বাড়ানোর প্রকল্পও চলমান রয়েছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ওই কাজ শেষ হলে প্রতি বছর নতুন করে ১৮ লাখ যাত্রী সেবার আওতায় আসবে।