করোনার বিধিনিষেধ না মানা এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

করোনার বিধিনিষেধ না মানা এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো করোনা মহামারীতে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছে না। বরং অনেক এয়ারলাইন্সই করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই বিদেশ এদেশে যাত্রী নিয়ে এসেছে। অথচ আকাশপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে করোনা নেগেটিভ সনদ প্রদর্শন ৫ ডিসেম্বর থেকেই বাধ্যতামূলক হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ৩ ডিসেম্বর ওই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু ওই নির্দেশনা মানছে না ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশী-বিদেশী ৯টি এয়ারলাইনস। ওসব এয়ারলাইন বিভিন্ন দেশ থেকে সনদবিহীন বিপুলসংখ্যক যাত্রী এদেশে এনেছে। যে কারণে ওসব যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি করোনার নেগেটিভ সনদ ছাড়াই বিদেশ থেকে যাত্রী আনার অভিযোগে এবার এয়ারলাইন্সগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ করোনা নেগেটিভ সনদবিহীন যাত্রী পরিবহনে জড়িত এয়ারলাইন্সগুলোকে ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছে। একইসঙ্গে ব্যবস্থা নিতে ৯ এয়ারলাইন্সের তালিকাও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই এয়ারলাইন্সগুলো হচ্ছে- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সালাম এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজ, সৌদি এ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, এয়ার এশিয়া, এয়ার এ্যারাবিয়া, গালফ এয়ার ও তার্কিশ এয়ারলাইন্স।
সূত্র জানায়, আকাশপথে বাংলাদেশ আসতে হলে সকল যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করতে হবে এবং শুধুমাত্র নেগেটিভ যাত্রীরাই আসতে পারবে। বিমানবন্দরে ওই নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। একইসঙ্গে বিমানবন্দরেও যাত্রীর লক্ষণ উগসর্গ আছে কিনা অনুসন্ধান করা হবে। কোন যাত্রীর উপসর্গ দেখা গেলে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও তাকে নির্ধারিত হাসপাতালে পরবর্তী পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। প্রয়োজনে আইসোলেশন সেন্টারেও পাঠানো হবে। তবে কোনো যাত্রীর মধ্যে উপসর্গ দেখা না গেলে তাকে নিজ বাড়িতে গিয়ে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বাংলাদেশী শ্রমিক যাদের বিএমইটি কার্ড আছে, তারা যে দেশ থেকে আসবে সেদেশে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সহজলভ্য না হলে অ্যান্টিজেন বা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য পরীক্ষার সনদ নিয়ে দেশে আসতে পারবে। বাহরাইন, চীন, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে চলাচল করা ফ্লাইটের ক্ষেত্রে করোনা মহামারীর মধ্যে এ নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশে থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অন্যান্য গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট নেই। সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, দুবাই, আবুধাবি, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্যে ট্রানজিট নিয়ে যাত্রীরা ওসব গন্তব্যে যাওয়া-আসা করে। ফলে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অন্যান্য গন্তব্যে চলাচল করা ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও ওই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। তবে শিডিউল বাণিজ্যিক ফ্লাইট ছাড়া রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ত্রাণ, মানবিক সাহায্য, প্রত্যাবাসন, বাংলাদেশী নাগরিকদের ফেরত আনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কূটনৈতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না। তাছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনৈতিক মিশনগুলোর কূটনৈতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও পিসিআর ল্যাবে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে, যা যাত্রার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করতে হবে। বিদেশী কোনো উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশ আসতে হলে তারও পিসিআর ল্যাবে করোনা নেগেটিভ হওয়ার সনদ থাকতে হবে। এখন সরকার ঘোষণা দেয়ার পরও করোনা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে না থাকায় বিদেশ ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকশ যাত্রীকে উত্তরার দিয়াবাড়ির প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকোন ধরনের তদ্বির ও প্রভাবের কাছে মাথানত করেনি। আর সামনের দিনগুলোতে এ বিষয়ে আরো কড়াকড়ি করা হবে। প্রয়োজনে তাদের দেশে ঢোকার পরিবর্তে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। বারবার ঘোষণা দেয়ার পরও এয়ারলাইন্সগুলো কেন তাদের করোনা সনদ ছাড়াই যাত্রী ঢাকায় আনছে তারও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। প্রয়োজনে আদেশ অমান্যকারী এয়ারলাইন্সগুলোকে জরিমানার আওতায় আনার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে এ বিষয়ে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, বেবিচকের ঘোষণা অনুয়ায়ী বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সই তা মেনে যাত্রী বহন করছে। দেশে ফেরা যাত্রীদের বেশিরভাগই সঙ্গে করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসছে। ফলে আগের তুলনায় তাদের কাজের চাপ কমেছে। আশা করি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের সকলেই করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফিরবে। সবাই যদি করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে ফেরে তাহলে বিমানবন্দরেও ঝামেলা কম হয়। কাজের বাড়তি চাপ পড়ে না। তবে যে কোন সিদ্ধান্ত নতুন করে বাস্তবায়ন করা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। সেক্ষেত্রেও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে যারা করোনা সনদ না নিয়ে আসবে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। তাদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে হবে। যাত্রী নিজে পজিটিভ না হলেও একই কক্ষে অবস্থানকারী একজনের পজিটিভ হলে তাকেও ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যারাই আসবে তাদেরও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে নিজ খরচে করোনো নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো যাত্রীদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নাগরিক। তাদের অধিকাংশই রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আসে। আগাম টিকেট কেটে রাখায় তাদের বিমান নিয়ে আসতে বাধ্য হয়। যাত্রীদের অনেকেই নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসার বাধ্যবাধকতার কথা জানতো না। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের তো কিছু করার নেই। এটা একটা সমন্বিত কাজ।
অন্যদিকে এ ধরনের নির্দেশনা অমান্য করা হলে কি ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে সে বিষয়ে বেবিচক সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর জানান, প্রাথমিকভাবে সব এয়ারলাইন্সকেই সতর্ক করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে মাত্র কয়েকদিন হলো। এখনো সবাই হয়ত তা মেনে চলতে পারছে না। তবে তারপরও যদি কোন এয়ারলাইন্স এভাবে নেগেটিভ সনদ ছাড়াই যাত্রী আনে, সেটার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেমন অপরাধ গুরুতর হলে এয়ারলাইন্সের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এমনও হতে পারে বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে আইন অমান্যকারী এয়ারলাইন্সগুলোকে আর্থিক জরিমানার মতো ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দেশের প্রধান গেটওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাতে কোনো করোনা পজিটিভ রোগী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। নেগেটিভ সনদ না থাকলে সরাসরি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন