ভাসানচরে গিয়ে সন্তুষ্ট রোহিঙ্গারা

ভাসানচরে গিয়ে সন্তুষ্ট রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভাসানচরে গিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোহিঙ্গারা। তারা জানিয়েছেন, সেখানে যাওয়ার আগে অন্যরা তাদের নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। কেউ বলেছেন তাদের না খাইয়ে রাখা হবে। আবার অনেকে ভয় দেখিয়েছেন, ভাসানচরে গেলে সাগরের অপদেবতারা তাদের খেয়ে ফেলবে। গতকাল শনিবার ভাসানচরে আসা মোছা. জুলেখা বলেন, অন্য রোহিঙ্গারা বলতো, ভাসানচরে গেলে সাগরের ভেতর থাকা অপদেবতা তোদের খাবে। বাঘ-ভাল্লুক খাবে। আবার অনেক রোহিঙ্গা তামাশা করে বলেছিল, ভাসানচরে গেলে তোমাদের হাড়হাড্ডি ভেঙে দেবে। অনেক ভয়ভীতি দেখিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা খুব সুন্দরভাবে এসেছি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করেছেন। জুলেখার স্বামী মো. রইসুল বলেন, ভাসানচরে নেয়ার সময় আমাদের অনেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলত, সেখানে গেলে আমাদের না খাইয়ে মেরে ফেলবে। কিন্তু এ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। তিনি আমাদের বাংলাদেশে প্রবেশের সময় সহযোগিতা করেছেন এবং এখানে যদি আমাদের না খাইয়ে মেরেও ফেলে তাও ওঁর (শেখ হাসিনা) প্রতি বিশ্বাস আছে। আল্লাহ আমাদের রিজিক দেবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন ঝড়-বৃষ্টিতে বাংলাদেশে এসেছি, তখন এই দেশের সরকার আমাদের পাহাড়ের মধ্যে আশ্রয় দিয়েছে। এরপর আমরা ভাসানচরে আসার পর আল্লাহ অনেক ভালো রাখছেন। আল্লাহর কাছে আমরা শুকরিয়া আদায় করছি বারবার। মিয়ানমার সরকার আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার আমাদের ঠাঁই দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। প্রথম ধাপে গত শুক্রবার ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা ভাসানচরে এসেছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৬৮, নারী ৪৬৪ ও শিশু ৮১০ জন। গত শুক্রবার দুপুরে সেখানে পৌঁছলে তাদের সবার শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। এরপর হাত ধুয়ে জেটি থেকে গাড়িতে করে তাদের আবাসস্থলের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুদের চলাচলে সাহায্য করেন নৌবাহিনীর সদস্যরা। ভাসানচরে পৌঁছে রোহিঙ্গারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে এনজিওগুলো বিরোধিতা করে আসছিল বলে এতদিন অভিযোগ ছিল। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সম্প্রতি ২২টি এনজিও নোয়াখালীর হাতিয়ার এই দ্বীপে কাজ শুরু করেছে। জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ও এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে ভাসানচরে ৬৬ টন খাদ্যসামগ্রী নেয়া হয়েছে। প্রথম দুই মাস তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এরপর নিজ নিজ বাসস্থানেই রান্না করতে পারবেন তারা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন হাজার ১০০ কোটি টাকায় নির্মিত রোহিঙ্গাদের জন্য এই অস্থায়ী আবাসস্থল এখন কর্মমুখর। দ্বীপটি বাসস্থানের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও বেসামরিক প্রশাসনের প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভবন, মসজিদ, স্কুল হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে ভাসানচরে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

মাদারীপুরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholders) অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা