শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গভাবে সড়ক আইন কার্যকর হবে : কাদের

শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গভাবে সড়ক আইন কার্যকর হবে : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন সড়ক আইন আংশিক কার্যকর হয়েছে, পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। তবে এটা বাস্তবায়ন করা মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। এ আইন সম্পূর্ণ কার্যকর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। সকলের সহযোগিতায় শিগগিরই এই আইন পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নিরাপদ সড়ক চাই আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা জানান ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, নিরাপদ সড়কের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে গত ১২ বছরে ব্যাপক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে সরকার। তবে আমাদের এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি যতদূর এগোনোর কথা, ততোদূর আমরা এগুতে পারিনি। নতুন সড়ক আইন আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। আমরা যদি সড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে না পারি তাহলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। সেতুমন্ত্রী বলেন, নতুন সড়ক আইনটি বাস্তবায়ন ও প্রয়োগে কিছু সমস্যা আছে, যার কারণে আইনটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। মানুষ এখন ট্রাফিক আইন মানতে চায় না, পথচারীরা পথ চলার নিয়ম মানতে চায় না। এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরী, আমাদের সচেতনতা দরকার। তিনি বলেন, আমরা ৪৩০ কিলোমিটার সড়ক চার লাইন করেছি। আরো ৪০০ কিলোমিটার সড়ক চার লাইন করার প্রস্তুতি চলছে। নতুন এই চার লেনের কাজ আমাদের এগিয়ে চলছে। আমাদের এ রকম বড় সড়ক থাকলে আমরা দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলতে পারতাম। খুব শিগগিরই এটা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সবগুলোই চার লেনের হবে। পাহাড়ি অঞ্চলে ও আমাদের দুই লাইনের মেরিন ড্রাইভ সড়ক হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ঢাকা-সিলেট রাস্তাও নতুন করে চার লেনের হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। মন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমরা সড়ক ভিজিট করতে পারছি না। আরটিভি সিইও সৈয়দ আশিকুর রহমানের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নিরাপদ সড়ক আইন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাস্তবায়ন করা হলেও, কোনো এক অদৃশ্য কারণে বারবার হোঁচট খাচ্ছে। যদিও যুগোপযোগী এই আইনটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর পরিবহন খাত থেকে সাধুবাদ জানানো হয়, কিন্তু আইনটি বাস্তবায়নের পথে তারাই (পরিবহন খাত) আবার কালক্ষেপণ করতে চাইছে ও বাধার সৃষ্টি করছে। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করা এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি। প্রায় তিন দশক হতে চলল সড়ককে নিরাপদ করার সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে আসছে নিসচা। এই সামাজিক আন্দোলনের শুরু থেকেই আমরা চালক, মালিক, যাত্রী, প্রশাসন সবাইকে যার যার দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করতে চেয়েছি। আজও সেই কাজটি করে চলেছি। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা একটি স্পষ্ট বোধ করতে পেরেছি যে, সড়ককে নিরাপদ করার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। মালিক, প্রশাসন ও যাত্রীদের অধিকাংশ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কতটা আন্তরিক, সেটাই যেখানে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, সেখানে কতটুকু সচেতনতা আশা করা যায়? যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, সড়ক দুর্ঘটনা কেন রোধ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর আমরা এতগুলো সময় পার করলাম, অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় সচেতনতার ক্ষেত্রে তার ফলাফল শূন্যই বলা চলে। ২৫ বছরের পাকিস্তানের নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে পারলাম মাত্র ৯ মাসে। ৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলে ৫০ বছর পার হতে যাচ্ছে, আমরা সড়ক দুর্ঘটনাকে কমিয়ে একটি জায়গায় দাঁড় করাতে পারছি না কেন? তাহলে কি আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আন্তরিক না? আর এই আন্তরিকতার অভাব কোথায়? এত বছর কাজ করার পরও কেন সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না, এমন প্রশ্ন তুলে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এটা অর্থনীতির কোনো সমস্যা নয়। ৫০ বছরে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এত কিছু যদি আমরা করতে পারি, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে না কেন? এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে কিছু বিষয়ের উদাসীনতা। এই উদাসীনতার কথা বলতে হচ্ছে কারণ আন্তরিকতার অভাব বলে। নানা অব্যবস্থাপনা দূর করার বিষয়ে বরাবরই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে সমস্যা যে তিমিরে থাকার সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। যারা সরকারি দলে আছেন শুধু তারাই নন, যারা বিরোধী দলে ছিলেন তারাও এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাদের সদিচ্ছার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সভায় বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া