তরুন প্রজন্মের নতুন হুমকি ই-সিগারেট

তরুন প্রজন্মের নতুন হুমকি ই-সিগারেট

অনুপ বালো : সিগারেট কম্পানিগুলো তরুণদের মাঝে ই-সিগারেটের (নেশা সৃষ্টিকারী নতুন পণ্য) ব্যবহারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশলে ই-সিগারেটের প্রচারণা চালাচ্ছে। যা তরুণ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে শতকরা ২ ভাগ মানুষ ই-সিগারেট ব্যবহার করছে। এই উপকরণ ব্যবহার বৃদ্ধির আগে এখনই নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।
তারা আরো বলেছেন, বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিয়ে স্পষ্ট কোন আইন না থাকায় সূলভ মূল্যে অহরহ যত্রতত্র ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রয় করা হচ্ছে। নেশা সৃষ্টিকারী নতুন এ পণ্য শুধু দোকান কিংবা মার্কেটেই নয়, বিক্রি হচ্ছে অনলাইন মার্কেট গুলোতেও।
বাংলাদেশের তরুনদের আকৃষ্ট করতে ই-সিগারেট দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক গড়ে তোলা হয়েছে। তারা অবৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন তৈরি করছে বলেও জানা গেছে। বিশেষ করে ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সামাজিক মাধম্যে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তারা তাদের নিজস্ব কিছু চিকিৎসকের মাধ্যমে যারা ধূমপান ছাড়তে চায় তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে তামাক কম্পানিগুলো। টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এর এক গবেষণা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শতকরা ৬৬.২ ভাগ ধুমপান ছেড়ে দেওয়া কথা ভেবেছেন কিন্তু তামাক কোম্পানি অপকৌশলের মাধ্যমে তাদেরক আবার ই-সিগারেটে আসক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে টিসিআরসি গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে।
জানা গেছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্যের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে তার মাধ্যমে ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বাংলাদেশে ই-সিগারেট খুব বেশি পরিচিত না হলেও বর্তমানে সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের মাঝে ই-সিগারেটের ব্যবহারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশলে প্রচার চালাচ্ছে। যা তরুণ প্রজন্মের জন্য মারাত্নক হুমকি।
তাই তরুণ সমাজকে রক্ষায় এখনই ই-সিগারেট বন্ধ করা জরুরি। এ লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। এরআগে প্রয়োজন অধ্যাদেশ জারি করে ই-সিগারেট বন্ধ করে দিতে হবে বলে বিজ্ঞমহল মনে করছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাবি মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তার আগেই আমরা তামাকমুক্ত হতে চাই। সেজন্যই ই-সিগারেটের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে কাজ করতে হবে। তিনি ই সিগারেট আমদানি বন্ধে অর্থ আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বলেন, ধূমপান মাদকের প্রবেশ দ্বার। আমাদের নতুন প্রজন্ম ই-সিগারেট নামে ক্ষতিকর পণ্যে আসক্ত হয়ে পড়ার আগেই এর প্রসার রুখতে হবে। তাই প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, ই-সিগারেট তরুণদের তামাক সেবনের উৎসাহ দেয়। সিগারেট-থেকে ই-সিগারেট নিরাপদ তা ভাবার কোন কারণ নেই। এটা তামাক কোম্পারী অপপ্রচার।
সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, মুনাফার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঝুঁকিতে ফেলেছে ই-সিগারেট ব্যবসায়ীরা। ই-সিগারেটের ভয়াবতা থেকে তরুণদের রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারির বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে তামাক কোম্পানীগুলো ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এছাড়াও যারা ধুমপান ছাড়তে চায় তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। ই-সিগারেটের প্রসার বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ই-সিগারেট নিয়ে স্পষ্ট কোন আইন না থাকায় দেশে ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রয় চলছে। সিগারেট কম্পানিগুলো ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর বলে তরুণদের আকর্ষণ করছে। ইতিমধ্যে ই-সিগারেটের ভয়াবতা থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য ভারতসহ বিশে^র ৪২টি দেশে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৫৬টি দেশ ই-সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের উপর বাধ্য-বাধকতা আরোপ করেছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে সাংবাদিক সংগঠন ও অংশীজনদের মতামত নেওয়া শুরু

ফরিদপুরে ৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল