বাতিল হচ্ছে ৩০০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ

বাতিল হচ্ছে ৩০০ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় তিন বছর অপেক্ষার পর ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগের এক হাজার ৩৫ মুক্তিযোদ্ধার ভাতা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এর মধ্যে ৬১১ জনই বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাদের বিরুদ্ধে সহযোদ্ধাদের অভিযোগ থাকায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩০০ জনের ভাতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। শিগগিরই তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদও বাতিল হবে। 

২০১৭ সালে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় আড়াই হাজার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ করে সরকার। পরে তাদের মধ্যে দুই হা র ১৮৮ জন ভাতা বন্ধের বিরুদ্ধে জামুকায় আপিল করেন। এর মধ্যে প্রথম দফায় চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশের পাঁচটি বিভাগের ভাতা বন্ধ হওয়া এক হাজার ৭৬৪ জনের শুনানি (সাক্ষাৎকার) গ্রহণের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ-সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। ঢাকা ছাড়া অন্য চার বিভাগ হলো সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর। এ জন্য জামুকার নেতৃত্বে গঠন করা হয় পৃথক যাচাই-বাছাই কমিটি।
জামুকার ৬৯তম সভায় কার্যপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভাতা বন্ধ হওয়া এক হাজার ৭৬৪ জনের আপিল শুনানির পর এক হাজার ৩৫ জনের ভাতা পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য ৪২৯ জন আপিল শুনানিতে উপস্থিত হননি। যার ফলে তাদের বিষয়ে কোনো সুপারিশও করা হয়নি। আর মুক্তিযোদ্ধা-সংক্রান্ত প্রমাণ এবং আপিলের শুনানিতে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় ৩০০ জনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের সনদ বাতিল করা হবে। গত ১৯ অক্টোবর যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ-সংক্রান্ত ৬৯তম সভার কার্যপত্র অনুমোদন করেন জামুকার সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী সমকালকে বলেন, গেজেটধারী অনেক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধেই বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ দিয়েছিলেন। আমরা সেগুলো আমলে নিয়ে নিজ নিজ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠিয়েছিলাম। কমিটি অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য নিয়েছে, আবার অনেক অভিযুক্ত কমিটির সামনেও হাজির হননি। তাদের যাচাই-বাছাইয়ের পর উপজেলা কমিটি দুই হাজারেরও বেশি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যা দিয়ে জামুকায় তালিকা পাঠিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জামুকার সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আপিলকারীদের সাক্ষাৎকার (শুনানি) গ্রহণ করেছি। এতে যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। তাদের গেজেটও বাতিল হয়ে যাবে। আর যাদের ভাতা চালু হয়েছে, তারা আগের বকেয়া (ভূতাপেক্ষ) ভাতাও বিধি অনুযায়ী পাবেন।
জামুকা সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ঢাকার ৭৮২, সিলেটের ১৮৮, ময়মনসিংহের ১৭৬, রাজশাহীর ৩৯১, রংপুরের ২২৭ জনসহ মোট এক হাজার ৭৬৪ জনের করা আপিলের শুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪৯৩, সিলেটের ১৬২, ময়মনসিংহের ১৪৯, রাজশাহীর ৫৮ ও রংপুরের ১৭৩ জনের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল বিভাগ থেকে করা আপিলের শুনানি এখনও চলছে। এ কারণে তাদের প্রতিবেদন জামুকার ৬৯তম সভায় উপস্থাপন করা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশে এখন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৩৮ হাজার। তবে ডাটাবেজে এখনও যুক্ত হয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার। বর্তমানে ভাতা পাচ্ছেন দুই লাখ তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধা। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা ১২ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পান। এ ছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের

সদস্যরাও মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এ শ্রেণি (পঙ্গুত্বের হার ৯৬-১০০ ভাগ) ৪৫ হাজার, বি শ্রেণি (পঙ্গুত্বের হার ৬১-৯৫ ভাগ) ৩৫ হাজার, সি শ্রেণি (পঙ্গুত্বের হার ২০-৬০ ভাগ) ৩০ হাজার টাকা, ডি শ্রেণির (পঙ্গুত্বের হার ১-১৯ ভাগ) যুদ্ধাহতরা ২৫ হাজার এবং সাত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের মাসিক ভাতা ৩৫ হাজার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার মাসিক ৩০ হাজার এবং মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ২৫ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। এর সঙ্গে চলতি অর্থবছর থেকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা হারে বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজাদ কাশ্মীরে বিক্ষোভ, নিহত ৪

বিএনপি ইসরায়েল-নেতানিয়াহুর দোসর: পররাষ্ট্রমন্ত্রী