বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চ্যালেঞ্জের সঙ্গে রয়েছে শঙ্কাও

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চ্যালেঞ্জের সঙ্গে রয়েছে শঙ্কাও

কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে যাচ্ছে ইউজিসি

এইচএসসির জিপিএ বিবেচনায় নাও নেয়া হতে পারে

শহীদুল ইসলাম : করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বষের্র ভর্তি পরিক্ষা কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে এ নিয়ে চলছে নানান বিশ্লেষণ। গত ১৭ অক্টোবর ২০২০ শনিবার উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’ অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ৪৬ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ভার্চুয়াল এক সভা শেষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সভাপতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে মত দেন। এর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে এ নিয়ে চলছে বিভিন্ন মতামত।

ইতিমধ্যে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া নিয়ে মত দিয়েছেন অনেক শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে উপাচার্যদের আরও সময় নিয়ে ভাবা উচিৎ।

এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় ‘অটো প্রমোশন’ হওয়ায় অনেক খারাপ শিক্ষার্থীরাও পাশ করেছেন। তাই সরকারি পবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে শঙ্কিত অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

বিশেষ করে অনলাইনে  ভর্তি পরীক্ষা নিলে গ্রামে থাকা শিক্ষার্থদের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যাওয়ার শংঙ্কা প্রকাশ করেছে আইটি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবী খুঁজতে গিয়ে যাতে উলটো না হয়, সেদিকে নজর দেয়ার আহবান জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, ইন্টারনেট যোগাযোগ এখনো গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি বিশাল সমস্যা। একযোগে অনেক পরীক্ষার্থী এবং অবাধ ইন্টারনেট সংযোগ একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

এ ছাড়া, শিক্ষার্থী ও অভিভাকদের অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে রয়েছে আরো প্রশ্ন! যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পাশকৃত শিক্ষার্থীদের চেয়ে একটু বেশি দক্ষ। সেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যেমে মিডটার্ম, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিতে পারছে না, সেখানে কীভাবে তারা ভর্তি পরীক্ষা নেবে?  বিশ্ববিদ্যালয়ের মিড, সেমিস্টার ফাইনালের চেয়েও তো ভর্তি পরীক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হতে পারে সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর জানিয়েছেন, ভর্তি পরীক্ষার জন্য তারা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। ইতোমধ্যে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে। উপাচার্যরাও সফটওয়্যার দেখে ইতিবাচক মত দিয়েছেন।

উপাচার্য বলেছেন, শিক্ষার্থীরা অনলাইনে থেকে যখন অ্যাপসটি অন করবে তখন আমরা তাদের লাইভ মনিটরিং করতে পারব। অফলাইনে থাকলে ছবি এবং সাউন্ড রেকর্ড করা থাকবে। এটা পরবর্তী সময়ে আমাদের সার্ভারে চলে আসবে। তখন আমরা বুঝতে পারব তিনি নকল করেছে কি না। এই অ্যাপসের মাধ্যমে এমসিকিউ ও লিখিত দুই ভাবেই পরীক্ষা নেয়া যাবে।

তিনি আরো বলেন, স্ক্রিন শট নিয়ে মেসেঞ্জার, হোয়াটস আপ বা ভাইভার বা অন্য কোনো অ্যাপে পরীক্ষার্থী প্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিলে সেটা ধরা যাবে। কোনোভাবে ঐ সফটওয়্যার মিনিমাইজ করার চেষ্টা করলে তাকে ওয়ার্নিং দেওয়া হবে। বন্ধ করে দিলে পরীক্ষা শেষ হবে। আর সে পরীক্ষায় প্রবেশ করতে পারবে না। অন্য ডিভাইসেও করতে পারবে না। যেহেতু তাকে প্রতিটি মুহূর্তে মনিটরিং করা হচ্ছে। এ কারণে সব কিছু সার্ভারে রেকর্ড হয়ে থাকবে।

পরীক্ষার জন্য সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে হলে পরীক্ষার্থীকে সার্বক্ষণিক অনলাইনে থাকতে হবে না। শুধুমাত্র শুরুর ১০ মিনিট ও শেষের ১০ মিনিট অনলাইনে থাকলেই হবে। এমনকি বিদ্যুৎ না থাকলেও কোন সমস্যা হবে না। সফটওয়্যারটি যখন চালু হবে তখন ডিভাইসের অন্য সবকিছু সয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। অফলাইনে থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর পর ছবি উঠতে থাকবে। অডিও রেকর্ড হতে থাকবে, যা ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্ভারে চলে আসবে। তখন পরীক্ষকরা এগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

কিন্তু অভিভাবকরা এ বিষয়টির উপরে ভরসা পাচ্ছে না তারা বলছেন, প্রথমে ১০ মিনিট ও যদি কোনো কারণে ইন্টারনেট সংযোগের মধ্যে পরীক্ষার্থী না থাকতে পারে তাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া এই পরীক্ষায় অন্যতম প্রধান সমস্যা নকল করার সুযোগ। মোবাইল ক্যামেরার সীমানার বাইরে কাছে থেকে মোবাইল স্ক্রিন দেখে প্রশ্নের উত্তর বলে দেওয়া সম্ভব। উত্তরগুলো লিখে মোবাইলের পাশ ঘেঁষে রেখে দিলেও এডমিন কোনোভাবেই এই নকল ধরতে পারবে না। এভাবে কয়েক জন মেধাবীকে পাশে বসিয়ে রেখে পরীক্ষার শতভাগ উত্তর দেয়া সম্ভব। এতে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হবে।

এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ এবং আরেক সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর জানান, সাধারণ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ বিবেচনায় নেয়া হয়। কিন্তু এ বছর বিকল্প সমাধান খুঁজা হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় এইচএসসির জিপিএ বিবেচনায় না নিয়ে এসএসসির ফলাফল বিবেচনায় আনা হতে পারে।’

একই সঙ্গে তারা এ বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। প্রক্রিয়াটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এবং শিক্ষকরা গ্রহণ করলে তবেই তা চুড়ান্তা করা হবে।

তবে এ বছর ভর্তি পরীক্ষার পক্ষেই রয়েছে ইউজিসি দাবি করে দিল আফরোজ জানান, ‘ইউজিসি সদস্যরা এ বছর ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে। আমরা স্যাট বা জিআরই বা জিমেট এর মতো পরীক্ষা নিতে পারি। আমরা প্রশ্ন এমনভাবে করব যাতে প্রক্রিয়াটি নিয়ে কেউ পশ্ন তুলতে না পারে।’

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুকদের ঝামেলা কমাতে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা’ শীর্ষক নতুন ব্যবস্থা  প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। তবে এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এই ব্যবস্থায় রাজি হয়নি।

ইউজিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, তারা আশা করছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয় ও মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থায় যোগ দেবে। কিন্তু এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য ছরের ন্যায় শিক্ষার্থীদের সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া