বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১১টায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার অফিসে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্চের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জানা যায়, নিহত নারীর ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্ব-পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। নিহত নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে ছিলো। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মা ভিকটিমকে জিম্মা রেখে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা সুদের ওপর ঋণ নেয়। ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যায়। এরপর বেলালের ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তার পরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
হুমায়ুন তার মাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। তার মা ভিকটিম হুমায়ুনকে তার ১৩ শতক জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করার জন্য বলেন। হুমায়ুন প্রতি উত্তরে তার মাকে জানান মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে বেলালের ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মায়ের জোর অসম্মতি ছিলো।
অপরদিকে ভিকটিম তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিলো। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য সে ভাইকে প্রায় চাপ-প্রয়োগ করতো। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমন ভিকটিমের ওপর বেজায় রুষ্ট ছিলো। এছাড়াও ভিকটিমের বাড়ির পাশের প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদের বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিলো। তাই তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন। হুমায়ুন জবানবন্দিতে জানায়, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে ২ শতাংশ হামিদকে বাকি ৮ শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়া হবে বলে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর মায়ের জমি সমান পাঁচ শতাংশ ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেওয়া হবে।
এ প্রতিশ্রুতিতে সব ব্যক্তিরা গত (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরে হুমায়ুন, কালাম, সুমন ও অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় ওই রাতের কোনো এক সময়ে ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে ভিকটিমকে হত্যা করেন। পরে বঁটি, চাপাতি, কোদাল দিয়ে পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধান ক্ষেতে শরীরের ৫ টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে তারা।
প্রেস ব্রিফিংকালে নোয়াখালী পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। নিহত নুরজাহান বেগম উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল বারেকের স্ত্রী। তিনি আট ছেলে ও এক মেয়েসহ ৯ সন্তানের জননী।এর আগে ৭ অক্টোবর (বুধবার) বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর জাহাজ মারা গ্রামের প্রভিডা ফিডে পেছনের একটি ধানক্ষেত থেকে ওই গৃহবধূর টুকরো টুকরো মরদেহের সন্ধান পায়। এর আগে হুমায়ুন কবির জানিয়েছিলেন, বুধবার ভোর থেকে তার মা নিখোঁজ ছিলেন। পরে স্থানীয় এক নারী বিকেলে ধানক্ষেতে শামুক কুড়াতে এসে একটি মানব দেহের টুকরো দেখতে পায়। পরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মায়ের মরদেহ শনাক্ত করেন।