ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে নদী, খাল-বিল ও নিচু এলাকায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকায় পানি বাড়তে শুরু করায় প্রায় ১১০ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি না সরে গেলে নষ্ট হয়ে যাবে কৃষকদের কষ্টের আবাদকৃত রোপা আমন জমি। ফলে কৃষকরা চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ নিয়ে এক প্রকার শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় কৃষকরা বলেছেন, কালবৈশাখী ঝড়, পোকার আক্রমণসহ নানা কারণে গত মৌসুমে বোরো ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন পায়নি অনেক কৃষক। কিন্তু ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন করে স্বপ্ন দেখে রোপা আমন আবাদ করেন। কিন্তু টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের সেই স্বপ্ন যেন নষ্ট হতে চলেছে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেহেতু বন্যা নয়, বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই আমন নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। নিচু এলাকা থেকে যদি বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যায় তাহলে আবাদের কোনো ক্ষতি হবে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন চাষ আবাদে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রোপণকৃত জমির মধ্যে উন্নত ফলনশীল বীজসহ বিভিন্ন রকমের বীজ রয়েছে। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১১০ হেক্টর আমন আবাদ পানিতে ডুবলেও কোনো ক্ষতি হয়নি।
দিন দিন নিচু এলাকায় পানি বাড়ায় কৃষকরা শঙ্কিত। উপজেলার ধরখার এলাকার কৃষক মো. রাজ্জাক মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ৮বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার তিন বিঘা জমি পানিতে ডুবে আছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এ অবস্থা থাকলে আমন আবাদ নষ্ট হয়ে, বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
মো. আলী আজগর মিয়া বলেন, গত বোরো মৌসুমে কালবৈশাখী ঝড় ও পোকার কারণে ধানের ক্ষতি হয়। বিঘায় ৫ থেকে ৬ মণের বেশি ধান পাওয়া যায়নি। বাজারে ধানের ভালো দাম থাকলেও ধান না পাওয়ায় তার অনেক লোকসান গুণতে হয়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১০বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেন। কিন্তু টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নিচু এলাকায় পানি বাড়ায় তার ৪ বিঘা জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি জমি থেকে না সরলে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হবে তার।
কৃষক চেরাগ আলী বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে দুই বিঘা আমন আবাদ পানিতে ডুবে আছে। এখন এ নিয়ে খুবই দুশ্চিনায় রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার ইউনিয়নের প্রায় ১১০ হেক্টর আমন আবাদ পানিতে ডুবলেও কোনো ক্ষতি হয়নি। জমি থেকে পানি দ্রুত সরে গেলে আমন আবাদের কোনো ক্ষতি হবে না। আশা করছি, বৃষ্টি না হলে দু-একদিনের মধ্যে পানি সরে যাবে। ধানের ফলন ভালো হতে সার্বিকভাবে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।