প্রতারক পারভীন র‌্যাবের হাতে আটক

প্রতারক পারভীন র‌্যাবের হাতে আটক

চট্টগ্রাম: নিজেকে কখনও ম্যাজিস্ট্রেট, কখনও ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক, কখনওবা ক্যাব সভাপতি, আবার কখনও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দেন তিনি।

কখনও সাজেন সাংবাদিক কিংবা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী,  পরিবেশবিদ, এনজিও বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, দেশি-বিদেশি নিয়োগকারী সংস্থার মহাব্যবস্থাপকও।

এই প্রতারকের নাম পারভীন আক্তার (৫০)। স্বামী সৈয়দ মিজান উল্লাহ সমরকন্দিসহ এসব পরিচয়ে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হুমকি দিয়ে আদায় করতেন টাকা।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাহাড়তলী থানাধীন ডিটি রোড এলাকায় ঢাকা ভবনের (ইউনিয়ন ব্যাংক ভবন) ১০ম তলায় ‘স্বীকৃতি’ নামের ভুয়া এনজিও সংস্থার অফিসে অভিযান চালিয়ে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) প্রতারক পারভীন আক্তারকে আটক করা হয়।

র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. মাহমুদুল হাসান মামুন বলেন, প্রতারক পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে ১০টিরও বেশি প্রতারণার মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ  বলেন, পারভীন আক্তার একজন ঠাণ্ডা মাথার প্রতারক। সে ও তার স্বামী মিজান সমরকন্দি এর আগেও আকবরশাহ, রাউজানসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিল।

র‌্যাব সূত্র জানায়, পারভীন আক্তার কথিত ‘স্বীকৃতি’ সংস্থার প্রধান। কয়েকজন ভুক্তভোগী গ্রাহক ও কর্মচারী পারভীনের  প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অভিযোগ করে। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সংস্থাটিতে সঞ্চয় করেন। কিন্তু সঞ্চয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পারভীন আক্তার তাদেরকে মূল টাকা বা লাভ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পারভীনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য কর্মচারীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলেও তাদেরকে চুরির মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে চাকরি করতে বাধ্য করতো। এছাড়া প্রত্যেক কর্মচারীর কাছ থেকে জামানত হিসেবে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করতো। কিন্তু সে টাকা আর ফেরত দেওয়া হতো না।

র‌্যাবের অভিযানে ওই অফিস এবং পারভিনের বাসায় অভিযান চালিয়ে বেশকিছু সঞ্চয় ও ঋণ পাসবই, পূরণ করা চেক, স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও জমা বই, চুক্তিনামা, স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যাম্প, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের জরিমানা আদায়ের রশিদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সিল, স্বীকৃতি নামক সংস্থার ডেবিট ও ক্রেডিট ভাউচার বই, ফিক্সড ডিপোজিট রশিদ বই, অনুদান আদায়ের রশিদ বই, ক্যাশ পজিশন বই, প্যাড, বিদেশ গমনের লিফলেট, বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড, নিয়োগপত্র, লেজার বই, অঙ্গীকারনামা বই, মাসিক চাঁদা আদায়ের রশিদ, মাইক্রোফিন্যান্স কর্মসূচির বই, হিসাব খোলার বই, সাপ্তাহিক টপশিট, মাসিক সঞ্চয় আবেদন বই, প্রকল্প প্রস্তাব, আইডি কার্ড, ৪টি পাসপোর্ট, পারভীনের একটি ভুয়া এনআইডি কার্ডসহ বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

জানা গেছে, পারভীন বিভিন্ন ভুয়া ও অবাস্তব প্রকল্প এবং সচেতনতা কার্যক্রম দেখিয়ে সরকারি অধিদপ্তরে অনুদানের আবেদন করতো। এছাড়াও ভুতুড়ে কার্যক্রম দেখিয়ে কিছুদিন আগে একটি মন্ত্রণালয়ে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৪০০ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। ২০১৪ সালে তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সমবায় অধিদপ্তর ‘স্বীকৃতি’ সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে লাইসেন্সের আবেদন করলেও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

প্রতারক পারভীন র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন পরিচয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায়, ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়, আইনি সহায়তা দেওয়ার নামে প্রতারণা, চাকরি দেওয়া বা বিদেশ পাঠানোর নামে টাকা আদায়সহ  তার অবৈধ কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।

পারভীন আক্তারের স্বামী মিজান উল্লাহ সমরকন্দির বাড়ি সাতকানিয়ার পুরানগড় এলাকায়। ‘দৈনিক আলোচিত কণ্ঠ’ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক পরিচয়ধারী মিজান উল্লাহ ও পারভীন ২০১৮ সালের ৬ মে দুপুরে রাঙ্গুনিয়ার রাণীরহাট বাজারে ‘চ্যানেল আজাদী’ লেখা স্টিকার লাগানো প্রাইভেট কার নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে যায়। তারা নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করার সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে আটক হয়। পরে অপরাধ স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সন্দ্বীপে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা

বাংলাদেশ ইসকন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, বিতর্কিত মৎস্য কর্মকর্তাকে বদলি